আজ ২৫ বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৫তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে তিনি কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সরদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে দেশজুড়ে নানা আয়োজন করেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, সংগীতানুষ্ঠান এবং গীতি-নৃত্যনাট্য পরিবেশনা।শৈশব থেকেই ঠাকুর পরিবারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ভারতবর্ষের বহু গুণীজনের সাহচর্যে বেড়ে উঠেন, যা তার মানস গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীকালে জমিদারির কাজে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকালে বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সংস্কৃতি তার সাহিত্যচিন্তায় গভীর প্রভাব ফেলে। এসব অভিজ্ঞতা থেকেই সৃষ্টি হয় তার বিপুল ও বৈচিত্র্যময় সাহিত্যভাণ্ডার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, গানসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় রয়েছে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তারই লেখা। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি জাগরণে রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে উঠেছে প্রেরণার উৎস। ১৯১৩ সালে
ইংরেজি ভাষায় অনূদিত সং অফারিংস (গীতাঞ্জলি) কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দেয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। মানবতার প্রশ্নেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সোচ্চার। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইটহুড উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন। ৮০ বছরের কর্মবহুল জীবন কাটিয়ে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ কবির প্রয়াণ হয়।রবীন্দ্রজয়ন্তীর কর্মসূচি : রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওগাঁর পতিসর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে আয়োজিত হচ্ছে রবীন্দ্রমেলা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বছরের জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ ।
শিলাইদহে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক মনসুর মুসা। ঢাকাসহ সারাদেশের সড়কদ্বীপগুলোতে বিশ্বকবির ছবি, কবিতা ও চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হবে।বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে থাকবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও একাডেমির তত্ত্বাবধানে ৬০০টি স্মরণিকা ও ২০ হাজার পোস্টার মুদ্রণ করা হয়েছে।বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা ও শিশুদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পালন করা হচ্ছে এই মহান সাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকী।বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলোতেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হচ্ছে। ছায়ানট, বিটিভি ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।