NEWSTV24
আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন নিয়ে নির্দেশনা থাকবে
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

ভিন্ন আঙ্গিকে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫। উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিন দিনব্যাপী এবারের পুলিশ সপ্তাহে জননিরাপত্তা নিশ্চিত, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে মাঠ পুলিশকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।পুলিশ সপ্তাহে আজ বেলা আড়াইটায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে পুলিশের করণীয়, জনসাধারণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ সেমিনার থেকে আসবে একগুচ্ছ সুপারিশ। এ ছাড়া এবার প্রথমবারের মতো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে পুলিশ। অন্যদিকে সরকার প্রধানের কাছে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনসহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হবে পুলিশের পক্ষ থেকে।পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেছেন, এবার পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন সেশন থেকে যেসব প্রস্তাব ও সুপারিশ আসবে এবং সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে যেসব দিকনির্দেশনা আসবে- তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিতে মাঠ পুলিশকে বলা হবে। পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়গুলো মনিটর করবে।

পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, এ বছর আমরা কার্যকর পুলিশ সপ্তাহ পালন করতে চাই। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনা শুনে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া এবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা তাদের পরামর্শ শুনতে চাই।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা আড়াইটায় যে কর্মশালা হবে সেখানে ২১টি গ্রুপে ২৯৪ পুলিশ কর্মকর্তা অংশ নেবেন। এতে ৩টি প্রতিপাদ্য বিষয় এবং ৬টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিপাদ্য ৩ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনকল্যাণে শৃঙ্খলা, অংশীদারত্ব ও দায়িত্বশীল পুলিশি ব্যবস্থা; ইতিবাচক মনোভাব ও জনবান্ধব আচরণের মাধ্যমে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের ভূমিকা।কর্মশালায় নির্ধারিত ৬টি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও কাজের পরিবেশ সৃষ্টি; পরাজিত শক্তির উসকানি, অপপ্রচার, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শান্তি বিনষ্টকারীদের অপচেষ্টা প্রতিরোধ; পুলিশ খারাপ না দেখিয়ে দেওয়ার জন্য অন্ধকার যুগের চিন্তা এবং খারাপ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসা; সব নাগরিকের আশ্রয়দাতা হয়ে পুলিশের পজিটিভ ইমেজ তৈরি; সামনের নির্বাচনে পুলিশ কোনোরকম চাপ, শক্তি বা হস্তক্ষেপের কাছে মাথা নত না করে আইনানুগভাবে দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচন এগুনোর পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার তীব্রতর হওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে ফ্রন্ট ফোর্স সংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার শনাক্ত করে সত্য তুলে ধরা।

পুলিশ সূত্র বলেছে, গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা তার কার্যালয়ে ৩৯ মিনিট দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে ২১ দফা নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনাগুলো অনুলিখন করে ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার এবং সব মহানগর পুলিশের কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আজকের কর্মশালার বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে প্রতিপাদ্য ও লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার ওই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের আলোকে। ২১টি গ্রুপ কর্মশালায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা, সীমাবদ্ধতা এবং উত্তরণের বিষয়টি সুপারিশ আকারে দাখিল করা হবে। কর্মশালার শেষে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন আইজিপি বাহারুল আলম। আর যেসব সুপারিশ আসবে সেগুলো পরবর্তীকালে বাস্তবায়নে নতুন করে ওয়ার্কপ্ল্যান তৈরি করবে পুলিশ সদর দপ্তর। এবারই প্রথম এ ধরনের কর্মশালা হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহে।পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৭টি দাবি তুলে ধরা হবে। দাবিগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন। এ ছাড়া এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা প্রদান; মৃত ব্যক্তির লাশ উত্তোলন, ময়নাতদন্তে প্রেরণ ও দাফন বা সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান; সাইবার সুরক্ষা ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশে স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠা; পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা; একই পদে দীর্ঘদিন চাকরির পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি/অফিসিয়িটিং পদোন্নিত প্রদান (কনস্টেবল হতে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত) এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে পুলিশ লিয়াজোঁ অফিসার পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ।

সূত্র বলেছে, এবারই প্রথম বঙ্গভবনে থাকছে না রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন। তেমনিভাবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কার্যালয়েও থাকছে না কোনো অনুষ্ঠান। বাদ দেওয়া হয়েছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডও।এবার প্রথমবারের মতো নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনবে পুলিশ। এজন্য আগামী ১ মে বেলা ১২টায় নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় নির্ধারণ করা আছে। এর আগে কখনও পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের সঙ্গে এভাবে মতবিনিময় হয়নি।