সিলেট টেস্টের বোলিং হয়ে পড়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজময়। দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেট নিয়ে বাহবা কুড়িয়েছিলেন। যদিও ম্যাচে তাঁর ১০ উইকেট প্রাপ্তি প্রতিপক্ষের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। তাই জিম্বাবুয়েকে ২০০ বা কাছাকাছি রানে বেঁধে ফেলতে প্রয়োজন ছিল সমন্বিত বোলিং পারফরম্যান্স। চট্টগ্রামে তা করতে পেরেছেন তাইজুল ইসলামরা। সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে তাদের বোলিং পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। তাইজুলের জ্বলে ওঠা, নাঈম হাসানের দুর্দান্ত স্পেল, অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবের ব্রেক থ্রুতে জিম্বাবুয়েকে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে আটকে রাখা সম্ভব হয়েছে। পারফরম্যান্সের নিক্তিতে প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে।
প্রথম টেস্ট হারের পর সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের উইকেট কিছুটা স্পিন সহায়ক করার সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে তিন স্পিনার নেওয়া হয় একাদশে। পছন্দের কন্ডিশনে বোলিং ভালোও করেন তারা। বিশেষ করে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের জ্বলে ওঠা ছিল স্বস্তির। দিনের শেষ সেশনে বারুদ বোলিং দিয়ে শিকার করেন পাঁচ উইকেট। এটি টেস্ট ইনিংসে ১৬তম পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। প্রথম টেস্ট খেলা হয়েছে স্পোর্টিং কন্ডিশনে। যেখানে ব্যাটিং-বোলিং খুব একটা ভালো হয়নি। জিম্বাবুয়ে বরং ধারাবাহিক ভালো খেলে ম্যাচ জিতেছে। দ্বিতীয় টেস্ট হচ্ছে ট্রিপিক্যাল চট্টগ্রামের উইকেটে। যেখানে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগের জন্য সমান সুযোগ থাকলেও ম্যাচে ছড়ি ঘোরান স্পিনাররাই। তাইজুল সেটা করে দেখালেন প্রথম দিন। বাঁহাতি এ স্পিনারের পারফরম্যান্স ভালো হলে দলের ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ায় ম্যাচে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। টেস্টে অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের মূল স্পিনার তাইজুল। শেষ ১০ ইনিংসে চারটি পাঁচ উইকেট পাওয়া স্পিনার তিনি। বর্তমান বিশ্বে খুব কম বাঁহাতি স্পিনারই আছেন তাঁর মতো ধারাবাহিক। এত ভালো করার পরও তারকা খ্যাতি না পাওয়ার আক্ষেপ থাকতেই পারে তাঁর।
বাংলাদেশ চট্টগ্রাম টেস্ট খেলছে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে। মাহমুদুল হাসান জয়ের জায়গায় নেওয়া হয়েছে ব্যাটার এনামুল হক বিজয়কে। তিন বছর পর টেস্ট খেলছেন তিনি। বোলিং বিভাগের পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মতো। পেসার খালেদ আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে অভিষেক করানো হয়েছে সিলেটের আরেক পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে। আর তৃতীয় স্পিনার হিসেবে খেলছেন নাঈম হাসান। সাকিব-নাঈম দু জনই ভালো করেছেন। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট পাওয়া মিরাজ বরং স্বাভাবিক ছন্দ দেখাতে পারেননি। ২১ ওভার বল করে ৪৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য তিনি। জিম্বাবুয়ের শুরুটা ভালোই ছিল। প্রথম সেশনে দুই উইকেট ৮৯ রান করে সফরকারীরা। দ্বিতীয় সেশনে স্বাগতিক বোলারদের কোনো রকম সুযোগ দেননি শন উইলিয়ামস ও নিক ওয়েলচ।
মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দু জনে ২৩০ বল খেলে ৯০ রানের হার না মানা জুটি গড়েন। দ্বিতীয় সেশনে ২৮ ওভার খেলে ৭২ রান যোগ করে মাসল ক্রাশ করায় শুশ্রূষা করতে ড্রেসিংরুমে ছিলেন। চিকিৎসা নিয়ে মাঠে ফিরে দ্রুত আউট হন। প্রথম দুই সেশনে পিছিয়ে থাকার হতাশা কেটে গেছে শেষ সেশনে তাইজুল জাদুতে। শেষ সেশনে চার উইকেট শিকার তাঁর। ২৭ ওভার বোলিং করে ৬৬ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। নাঈম দুই ও সাকিব এক উইকেট শিকার করেছেন। নিক ৫৪, উইলিয়ামস ৬৭ রানে রিটায়ার্ড আউট হওয়ায় জিম্বাবুয়েকে ব্যাকফুটে যেতে থাকে। তাদের ব্যাটিং কোচ ডিওন ইব্রাহিমের মতে, নিক মাসল ক্রাশ নিয়ে সংগ্রাম করছিল। হ্যামস্ট্রিং ও হাতের পেশিতে টান পড়ায় চা বিরতিতে শুশ্রূষা নেয়। বিরতিটাই ফোকাস নষ্ট করেছে। এ ছাড়া আমরা কিছু বাজে আউট হয়েছি। যে কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে হয়।