২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজবাড়িতে পুলিশের অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামে চলা বিশেষ অভিযানে ৯ জন মারা যান। রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। বহুল আলোচিত ওই ঘটনায় দুই আদালতে দুই ধরনের বিচার শুরু হয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্তের অভিযোগে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গত ৭ এপ্রিল ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অন্যদিকে, ওই অভিযানে নিহত ৯ জনকে জাহাজবাড়িতে এনে জঙ্গি নাম দিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা (মিসকেস) করা হয়েছে। যেখানে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। একই ঘটনায় দুই ধরনের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, সরকারের উচিত সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের মামলাটি পুনর্তদন্ত করা। কারণ পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত না করেই আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। যার ওপর ভিত্তি করে বিচারক চার্জগঠন করেছেন। এটা আইনি সাংঘর্ষিক। ভবিষ্যতে এ নিয়ে বড় প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে।
একই ঘটনায় দুই ধরনের বিচার চলতে পারে কিনা, জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফৌজদারি বিশেষজ্ঞ আমিনুল গনি টিটো আমাদের সময়কে বলেন, ধরেন কাউকে হত্যা করা হলো। যিনি হত্যা করলেন তিনি অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে মামলা করলেন। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে এলো যিনি মামলা করেছেন তিনিই হত্যাকারী। সেটা পরবর্তীকালে বের হয়েছে। সেটার প্রেক্ষাপট কিন্তু একই রকম, আবার একই রকম না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাটি হয়েছে অতিসম্প্রতি। আর আগেরটা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২০১৬ সালে। এটার তো তদন্ত শেষে চার্জগঠন হয়ে গেছে। এখন আসামিপক্ষ চাইলে আইসিটির রেফারেন্সে হাইকোর্টে যেতে পারে। তখন হাইকোর্ট সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটির বিচার স্থগিত করা বা অন্য কোনো আদেশ দিতে পারেন।
২০১৬ সালের ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে জাহাজবাড়িতে রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে পুলিশ জানায়, অভিযানে নিহত হয়েছে ৯ জন। হাসান নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়েছে। পালিয়ে গেছে আরেকজন। পুলিশ তখন দাবি করেছিল, নিহতদের সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। অভিযানের পর ওই বছরের ২৭ জুলাই মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। তাতে আসামি হিসেবে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই অভিযানের দুই বছর পর ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ৭ বছর পর গত ৭ এপ্রিল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।এ ঘটনায় ওইদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, এটা আইনি দিক থেকে হাস্যকর। অথচ একই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজানো সেই হত্যাযজ্ঞের দায়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক, সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সরকার। সেই মামলায় কারাগারে রয়েছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। ওইদিন আদালতে উপস্থিত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান বিচারককে বলেন যে, তাকে গুম থেকে জাহাজবাড়ির ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় পায়ে গুলি করে পুলিশ।