NEWSTV24
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সব মামলা নিরীক্ষার নির্দেশ
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:২৫ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে সব মামলা রুজু হয়েছে, সেগুলোর কতগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক, খতিয়ে দেখতে ৬৪ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ওই চিঠিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে, ২০০৯ (সংশোধনী ২০১২) ও (সংশোধনী ২০১৩) দায়েরকৃত সব মামলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ৭ হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। প্রত্যাহারকৃত মামলাগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলা নেই। এবার রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলাগুলোও প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ২৪ মার্চ জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ৬৪ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের আইজিপিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের শাসনামলে দায়েরকৃত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধনী ২০১২) ও (সংশোধনী ২০১৩) এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর বিধান ও ২৯৫-ক ধারার বিধান মোতাবেক মামলাসমূহ বিচারার্থে আমলে গ্রহণের লক্ষ্যে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, ভিন্ন মতাদর্শকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে সন্তুষ্টির নিমিত্তে দায়ের করা হয়েছে কিনা তা যাচাই বা পুনর্তদন্ত করার আবশ্যকতা রয়েছে। পটপরিবর্তনে বর্ণিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে কিনা, কিংবা পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে কিনা এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে কিনা; তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মামলায় বিবাদীগণ বিগত সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য পদ লাভ, সংহতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করায় জড়িত, অপহরণ ও প্রতিষ্ঠান বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, এমএফআইয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ, লিফলেট বিতরণ করার বিষয় উল্লেখ করে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ খসড়া চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের কে কী কারণে, কীভাবে কোন নির্দিষ্ট অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সম্পৃক্ততার প্রমাণকের বর্ণনা চার্জশিটে উল্লেখ করতে হবে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অসংখ্য মামলা হয়েছে। বিরোধী দল বা মতকে দমন করতে এসব মামলা রুজু করা হয়। গায়েবি মামলা তার বড় উদাহরণ। বিগত সরকারের আমলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের চিঠি দিয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকা এ সংক্রান্ত কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপারও আছেন। তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  বলেন, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর দুটি কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। জেলা কমিটির প্রধান প্রত্যেক জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট)। কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপার ও পাবলিক প্রসিকিউটরও আছেন। তারা এখন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিগত সময়ে দায়েরকৃত মামলাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠাবেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।২০২৩ সালের ২০ মার্চ রাজধানীর বনানী ক্লাব থেকে বিএনপির ৫৫ নেতাকর্মীকে আটকের পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তখন আটক বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, রাজনৈতিভাবে হয়রানি করতেই এই মামলা দেওয়া হয়েছে।