NEWSTV24
নিয়ম মানছে না লক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন, বইয়ের চাপে বিবর্ণ শৈশব
সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪০ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

দেশে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজধানীসহ সারা দেশে পাড়া-মহল্লার অলিগলি, ফ্ল্যাট বাড়ি বা ছাদে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে লক্ষাধিক বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল। এরমধ্যে প্রায় ৪০০ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অনুমোদন পেলেও বাকিগুলো অনুমোদনহীন। প্রায় ২ কোটি শিশু পড়াশুনা করছে এসব প্রতিষ্ঠানে। অনভিজ্ঞ শিক্ষক, সঠিক সিলেবাসের অভাব এবং উপযুক্ত গাইডলাইন না থাকায় মানসম্মত শিক্ষার ছিটেফোঁটা পাচ্ছে না তারা। অথচ ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি, টিউশন ফি ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষার নামে ফি আদায় করা হচ্ছে।পাশাপাশি নোট-গাইড ফি দিতেও বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নাম দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনে এসব কিন্ডারগার্টেনের অনুমোদন না থাকলেও অন্য স্কুলের নামে তারা রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় বসাচ্ছে। বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি এসব কিন্ডারগার্টেনের কোনো কোনোটি ইংরেজি মাধ্যমও চালু করেছে। সেখানে প্লে-গ্রুপ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। অথচ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানেরই সর্বোচ্চ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর কথা। এসব প্রতিষ্ঠান পাড়া-মহল্লায় চটকদার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছে।

এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অভিভাবকরাও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তুলে দিচ্ছেন কিন্ডারগার্টেনগুলোর সংশ্লিষ্টদের হাতে। অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি ও সংকীর্ণ পরিবেশে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। একটি কক্ষ বা একটি খুপরি ঘরই যেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শরীরচর্চার আলাদা জায়গা নেই; জাতীয় সংগীত এবং শপথ পাঠ হয় শ্রেণিকক্ষেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন। দিনের বেলায় বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও। যারা এসব কিন্ডারগার্টেনে পাঠদান করাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই আবার কলেজপড়ুয়া। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা বলে দিনের পর দিন তাদের দিয়েই চলছে ক্লাস-পরীক্ষা।সংশ্লিষ্টরা বলেন, ভুঁইফোঁড় এসব স্কুলে ভর্তি হয়ে কোমলমতি শিশুরা শিক্ষাজীবনের শুরুতেই যথাযথ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে উচ্চস্তরে গিয়ে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। নার্সারি ও কেজির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের পাশাপাশি প্রায় এক ডজন বই পড়তে হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্লে-গ্রুপে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো বই না থাকলেও এ স্তরের শিশুদের বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ, জ্যামিতি, অ্যাকটিভ ইংলিশ, ধর্ম, সাধারণ জ্ঞান, পরিবেশ পরিচিতি, ওয়ার্ড বুক, ড্রয়িং বুকসহ ১৪টি ডায়েরি কিনতে বাধ্য করা হয়।

পরবর্তী ক্লাস নার্সারিতেও ১২টি বই ও ১৫টি ডায়েরি, কেজিতে এনসিটিবির তিনটি বইসহ ১২টি বই পড়ানো হচ্ছে। এভাবে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অতিরিক্ত বই পড়ানো হয়। আছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কিন্ডারগার্টেনের এসব শিক্ষার্থীর একদিকে যেমন মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত বইয়ের চাপে বিবর্ণ হচ্ছে শৈশব। দেশের শিক্ষাবিদরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, দ্রুত এ-সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন না হলে কিন্ডারগার্টেনের নামে লাগামহীন শিক্ষাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। এমন অবস্থায় যত্রতত্র গড়ে তোলা প্রাক-প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব স্কুলকে এক ছাতার নিচে আনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এসব স্কুলের প্রাথমিক অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করতে আগের নীতিমালা কিছুটা সংশোধন আনতে একটি সাব-কমিটি করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।