NEWSTV24
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে
রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:২৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এরপর সম্প্রতি ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা মনে করছেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, ইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলে এ অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা- ভারতসহ সব রাষ্ট্রের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে বৈঠক হয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্কে আশার আলো তৈরি করেছে। দুই দেশের সম্পর্কে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, সেটা যেন আর সামনে না যায় অথবা এটা যেন কমে আসে, এ বৈঠকের মাধ্যমে তার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যতটুকু দেখেছি, এ বিষয়ে দুজনই আন্তরিক ছিলেন যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারনের উপকার করবে।জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। দুদেশের সম্পর্কটা হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি ভারতের সঙ্গে ঠিক সেভাবে বন্ধুত্বটা গড়ে ওঠেনি। এ নিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়নি। ভারত সবসময় বাংলাদেশ থেকে কেবল নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনা শুধু ভারতকে দেওয়ারই চেষ্টা করেছেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে অনেক বিষয় বিদ্যমান আছে। এর মধ্যে পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা ছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানে পালিয়ে ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনার আশ্রয় নেওয়া এবং তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদানও রয়েছে। এমতাবস্থায় ইউনূস ও মোদির ৪০ মিনিটের যে বৈঠক হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস সরাসরি এসব ইস্যুর পাশাপাশি জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার ভূমিকা, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের রেফারেন্সও তুলে ধরেছেন। মতিউর রহমান আকন্দ মনে করেন, বৈঠকে ইউনূস যা বলেছেন, তা দেশের মানুষেরই উচ্চারণ।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব মনে করেন, প্রতিবেশী এই দুই দেশের সম্পর্ক হবে পরস্পরের স্বার্থ ও মর্যাদা সুরক্ষার ভিত্তিতে। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের প্রতিবেশী। উভয় দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নে সুসম্পর্ক অনিবার্য। দুই দেশের সরকারপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্পর্কের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি, বাংলাদেশ ভারতের সুসম্পর্ক ভূ-রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ইউনূস ও মোদির বৈঠককে বহুল প্রত্যাশিত বলেই বিবেচনা করছি। অভ্যুত্থানের পর যখনই আন্তর্জাতিক বৈঠকগুলো হয়েছে তখনই বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ভারতের দিক থেকে ইতোপূর্বে সাড়া মেলেনি। শুরুর দিকে বিমসটেকের বৈঠকেও ভারতের পক্ষ থেকে অনীহা প্রকাশ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে, আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এতে করে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি হয়েছিল, মনস্তাত্ত্বিকভাবে যে দূরত্বটা তৈরি হয়েছিল, আমার ধারণা এটার খানিক অবসান হবে। আওয়ামী লীগের চোখ দিয়ে বা শেখ হাসিনার চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখার ভারতের যে প্রবণতা, এরও কিছুটা অবসান হবে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের দিক থেকে যেসব বিষয়ে বলার, তা বলেছেন। ভারতের দিক থেকেও তারা বলেছে। চীন, ভারত, মিয়ানমার ও আমাদের যে কূটনৈতিক বিষয়গুলো রয়েছে, এতে ভারত যদি আমাদের সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকার করতে থাকে, তাহলে সেটা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের বিবেচনায় হয়তো ভালো হবে না। যে কারণে হয়তো এবার বৈঠকে তাদের সম্মতি মিলেছে। আমরা তো প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ করব না। ন্যায্যতা, সমতা ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে, পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে আমরা আমাদের দিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে চাই। আমার মনে হয়, সেই অর্থে বরফ কিছুটা গলেছে।