NEWSTV24
স্থানীয় সরকারে হচ্ছে সিটি গভর্নমেন্ট
বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৩:৫৫ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। অংশীজনদের অনেকেই মনে করেন, সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক। শুধু তাই না, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের জন্য পৃথক বাজেট পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে নতুন ব্যবস্থা চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন অংশীজনরা। সংস্কার কমিশনও চায় ইউপি চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোট তুলে দেওয়া হোক। ইউপি ভোট হবে ওয়ার্ড সদস্য পদে। আর ওয়ার্ড সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিউটে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা তাদের ১৫ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। পরে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাদের প্রস্তাবনা পেয়েছি। তারা যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছে, তার কিছু কিছু আমরাও ভেবে রেখেছি। অর্থাৎ তাদের ভাবনার সঙ্গে আমাদের ভাবনার অনেক জায়গায় মিল রয়েছে।

কমিশনের প্রধান বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বিশেষ করে মেয়র, চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তাই কীভাবে এটি কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে প্রস্তাবনাএসেছে। এর আগে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হয়েছে। মাঠের মানুষ প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চায় না। তবে প্রদেশ না চাইলেও সেখানে বিভাগের দাবিটা উসকে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রদেশ, বিভাগ কেনোটাই চাই না। অন্তত এই মুহূর্তে নয়। নির্বাচিত সরকার এলে দুই বছর সময় নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে। আমরা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে চাই। আমাদের প্রস্তাবনায় উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি। ফৌজদারি মামলা, দেওয়ানি, বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়গুলো উপজেলা থেকে দিতে হবে।জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কমিশন চায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোনো মতামত দিতে চাই না। সরকার ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাচন এ বছর করার জন্য ৮৬ শতাংশ মতামত পেয়েছি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সংবিধানে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে স্থানীয় সরকার যুক্ত করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান করে কার্যকর জনসেবা নিশ্চিতকরণে স্থানীয় সরকারের তিনটি স্তরের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকারের কেন্দ্রস্থল হবে জেলা পরিষদ। যেটি জেলা সরকারের আদলে পরিচালিত হবে। পরিষদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে একটি মনিটরিং কাউন্সিল করতে হবে, যেখানে মাসিকভিত্তিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনিটরিং কাউন্সিলের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা যাতে জনমানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন, সেজন্য প্রয়োজনে তাদের প্রত্যাহার বা রিকলের ক্ষমতা জনমানুষের কাছে প্রদানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৬৫ শতাংশ ভোটারের আবেদনের ভিত্তিতে কেবল প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকারকে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিতে হবে। স্থানীয় সরকার হবে স্বশাসিত এবং জনগণের নিকট দায়বদ্ধ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করবে, নিয়ন্ত্রণ নয়। স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিনিধি সরকারি কর্মকর্তা বা অন্য কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধির কর্তৃত্বাধীন হবে না। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ রোধে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত তারিখে সব স্তরে একই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকারের কোনো কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কোনো ধরনের ভূমিকার সুযোগ থাকবে না। সংসদ সদস্যের কাজ সংসদে আইন প্রণয়ন এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। স্থানীয় সরকার পরিষদের সভায় নাগরিক প্রতিনিধির উপস্থিতি ও মত প্রকাশের আইনগত বিধান রাখতে হবে।