NEWSTV24
গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকটের শঙ্কা
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৪:৫৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

মাঘ মাস শেষ হয়নি, তবু গরম পড়তে শুরু করেছে। নাগরিকদের এখনই রাতে ফ্যান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে এখনই বাড়তে শুরু করেছে বিদ্যুতের চাহিদা। এ ছাড়া এক মাস পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। সেচ মৌসুমও শুরু হচ্ছে একই সময়ে। ফলে আগেভাগেই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারের গ্রীষ্মে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর গ্রীষ্মকালে ১৮ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে। বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, এই চাহিদা মেটাতে এ বছর সরকারকে হিমশিম খেতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ;ালানি সংকট এবং জ;ালানি আমদানিতে আর্থিক সংকট থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় হলো আগামী গ্রীষ্মকাল। আগের সরকারের রেখে যাওয়া বিদ্যুৎ বিলের বকেয়ার সঙ্গে দিন দিন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারেরও বকেয়া বাড়ছে। বিদ্যুতের বকেয়া বিল না পাওয়ার কারণে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তরা প্রাথমিক জ্বালানি কিনতে পারছে না। দিন দিন সরকারের কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছেই। একইভাবে গ্যাসের সংকট তীব্র হচ্ছে। অর্থ সংকটের পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না। দেশীয় উৎস থেকেও গ্যাসের জোগান কমছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকরা জানিয়েছেন সরকারের কাছ থেকে বকেয়া না পেলে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো কঠিন হবে। ফলে এবার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করতে না পারলে লোডশেডিং বাড়বে।

এদিকে প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়ছে। সামনের শহরের কোথাও কোথাও অল্প করে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ পিজিসিবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, গতকাল দিনের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াট, সন্ধ্যায় প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট। গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে নয় থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। দিনের বেলা গড়ে ১০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করেছে পিডিবি।এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। তবে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ নির্ভর করবে জ;ালানির জোগানের ওপর। তিনি বলেন, পিডিবি গড়ে ১২ টাকার বেশি দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে সেটা গড়ে সাড়ে ৮ টাকায় বিক্রি করা হয় গ্রাহকের কাছে। ফলে এই বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা পিডিবির জন্য কঠিন। তাই সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকির টাকা পাওয়ার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে গ্রীষ্মকালে জ;ালানি আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ। উপদেষ্টা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য কয়লা, প্রয়োজনীয় জ;ালানি তেল এবং চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানির। তবে সেটা অর্থপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করবে।

পিডিবির একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী মার্চে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। এই চাহিদা মেটাতে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৫ হাজার ৫৫৮ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ আমাদানি করে ২ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সবই বেসরকারর খাতে। বকেয়া বিল না পাওয়ার কারণে এসব উদ্যোক্তরা জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না।এ ছাড়া গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে প্রক্ষেপণ অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করাও অনিশ্চিত। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়েছে গত বছর। বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতি ইউনিটে গড়ে চার টাকার মতো লোকসান করে পিডিবি। ঘাটতি পূরণে ভর্তুকি দেয় সরকার। পিডিবি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকির টাকা ছাড় করলে বকেয়া শোধ করতে পারবে পিডিবি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নযন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, আসন্ন গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালানোর চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে বকেয়া বিল কিছু কিছু পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ;ালানির জোগানের নিশ্চয়তা থাকলে আশা করি আসন্ন গ্রীষ্মে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।বকেয়া বিদ্যুৎ বিল : পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত পিডিবির বকেয়া ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাস বিল বকেয়া জমেছে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস বিল না দিলে পিডিবিকে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারবে না পেট্রোবাংলা। আর ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি পাবে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া ৯ হাজার কোটি টাকা। আর অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে বকেয়া পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা। বকেয়া শোধ না হলে জ্বালানি আমদানি করে উৎপাদন ধরে রাখতে পারবে না এসব কেন্দ্র। এ ছাড়া ভারতের আদানির বকেয়া ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বর্তমানে চাহিদা কম থাকায় সক্ষমতার অর্ধেক সরবরাহ করছে আদানি।

বেসরকারি উদ্যোক্তরা বলছেন, বিল না পাওয়ায় উদ্যোক্তরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না। আর ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন সর্বনিম্ন ৪০ দিন সময় প্রয়োজন হয়। এখন বিল পাওয়া না গেলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো সম্ভব হবে না। ফলে আগামী গ্রীষ্মে ঘাটতি হতে পারে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, সরকারের কাছে বকেয়া প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা শোধ করতে অনুরোধ হয়েছে। সরকার এ টাকাটা পরিশোধ করলে তেল আমদানি করে মার্চ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারকে সহায়তা করা যাবে। না হলে সম্ভব হবে না।