জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা গতবারের মতোই বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়; যদিও এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনকে একটু হলেও বিতর্কিত করে। তবে এই নির্দেশনা ২৭ জানুয়ারি গুচ্ছভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে অনেক আগেই। ২০২০ সালে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চালু করে।২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য একটি মাইলফলক ছিল। কারণ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় তাদের অনেক হয়রানি হ্রাস পায়।বর্তমান পরিস্থিতিতে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না।কারণ শিক্ষার্থীরা একভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছে। এভাবে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য তা বাড়তি চাপ হবে। হয়রানির শিকারও হতে হবে তাদের। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীচ্ছু সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল, যাতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহাল থাকে।
যার ফলে ২৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে এক সভায় মিলিত হয়। সেখানে গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখার জোরালো দাবি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তীচ্ছু প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থ ও দাবি বিবেচনা করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম কঠোরভাবে মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা অনেকেই ইতিবাচক বলে দাবি করে আসছেন। তবে বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট আলাদাভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে। তাদের বেলায় কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি।এটা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এখানে বৈষম্য দেখা যায়। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা তখনই শতভাগ সফল হবে, যখন একটি পদ্ধতিতে সারা বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে হবে। মানুষ এখন আর বৈষম্য দেখতে চায় না।শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহাল থাক২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত শিক্ষাবর্ষে ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক নতুন আশা সৃষ্টি হয়। বাস্তবে সেই আশা পূরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। গুচ্ছ পদ্ধতির মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের আর্থিক কষ্ট লাঘব করা, ভোগান্তি দূর করা, সময় সাশ্রয় করা ও হয়রানি বন্ধ করা। পরীক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হলেও এটি নিয়ে কিছু বিতর্ক ও সমালোচনা তৈরি হয়, যা সমাধানযোগ্য। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম বা দুর্নীতি করে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আমার কর্মস্থল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলমান। এসব বিষয়ে উপাচার্যরা কঠোর হলে ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সহজ। তার পরও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চলমান থাক। যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সমাধান করতে হবে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো উচিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন, যা প্রশংসার দাবিদার।