NEWSTV24
আগামী বাজেটে গুরুত্ব পাবে অর্থ-ব্যাংক খাতের পুনর্গঠন
রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪:২৫ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে আর্থিক খাত সংস্কার, ব্যাংক খাত পুনর্গঠন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তবে অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব নিয়েছে, এ জন্য সবার আগে প্রয়োজনীয় জরুরি সংস্কারমূলক কার্যক্রম শেষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে। এর প্রতিফলন থাকবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। ইতোমধ্যে এসব বিষয়কে প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও এটি বেশ আগাম প্রস্তুতিই বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। কেননা নিয়ম অনুযায়ী বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হয় মার্চে। কিন্তু এবার দেশে বিশেষ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করায় এবং বিশেষ সরকার ক্ষমতায় থাকায় বাজেট সংশোধন ও প্রণয়নের কাজ একত্রে শুরু করা হয়েছে।  জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের নেতৃত্বে সরকারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভার একটি সূত্র জানায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক জঞ্জাল কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য একদিকে আর্থিক সংকট অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম চালানোর মধ্যেই ভারসাম্যহীনতার দিকে চলে গেছে সামষ্টিক অর্থনীতি। বৈদেশিক ঋণের বোঝা বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। আবার কমে গেছে সরকারের রাজস্ব আদায়। এদিকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে করকাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে এনবিআর। আগের সরকারগুলোর রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজস্ব বোর্ডকেন্দ্রিক যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত এবার নেওয়া হবে না। করজাল ও কর আদায় বৃদ্ধির জন্য কঠোর কিংবা অপ্রিয় সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন করা হবে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। যেখান থেকে অতিরিক্ত অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে। অবশ্য সরকারি কমকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দিলে সেখানে অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে সরকারকে। যা দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি কমাতে ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এই প্রথম নিয়ন্ত্রণমূলক বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য পাবলিক সেক্টরের ব্যয়ের লাগামও টানা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের লাগামও আপাতত টেনে ধরার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এতে করে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ কমে আসবে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে আইএমএফ ও অর্থ বিভাগ। এমনিতেই দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। এমন ধীরগতি আরও অন্তত দুই বছর চলমান থাকবে। এর ফলে চলতি বছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে। তবে দুই বছর পর এই প্রবৃদ্ধি আবার বাড়তে শুরু করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। এ জন্য আপাতত নিয়ন্ত্রণমূলক বাজেট দিয়ে অর্থনীতির অচলাবস্থার উন্নতি ঘটানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে যে কোনো মূল্যে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে না পারলে মূল্যস্ফীতির লাগাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করে আইএমএফ। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এ মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আর্থিক খাতে সংস্কারের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজটি শুরু করেছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নয়তো মানুষের কষ্ট লাঘব হবে না। খরচ কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যয় সংকোচন নীতি নিতে হবে। সুদের হার কমাতে হবে। ফলে একদিকে বিনিয়োগ ও ভোগ উভয়ই বাড়বে। এতে রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে একটি সংস্কারমূলক বাজেট প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগগুলোর অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করা যেতে পারে। আমাদের একটি সংস্কারভিত্তিক বাজেট দরকার। আমরা এর আগে অনেক বড় আকারের বাজেট পেয়েছি, কিন্তু সেখানে সংস্কারের উদ্যোগগুলো দেখা যায়নি। আবার যদি একই ঘটনা ঘটে, তাহলে বর্তমান সরকারও একই পথে হাঁটছে বলেই মনে হবে। এটি সবাইকে হতাশ করতে পারে। তিনি বলেন, আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে আগামী বাজেটে গ্রহণযোগ্য রাজস্ব, আর্থিক ও কাঠামোগত নীতি সংস্কার নিয়ে আসতে হবে। তাদের দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আগামীতে বিদ্যুৎ ও জলানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবসম্মত সংশোধিত বাজেট করা উচিত বর্তমান সরকারের। সেই বাজেটের ওপর ভিত্তি করে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। রাজস্ব আহরণের বিষয়ে তিনি বলেন, কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো যেন দ্রুততম সময়ে শেষ হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।