NEWSTV24
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ছে দেশি-বিদেশি চাপ
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪:৪৮ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি এবং এর সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দ্রুত নির্বাচন চায় সিপিবি, বাম জোটসহ অন্তত ৪৮টি রাজনৈতিক দল। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রার শুরুতে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানালেও এখন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতিও দিয়ে আসছে। তাদের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যও উঠে এসেছে যে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব। ঢাকায় সম্প্রতি বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে চীন ও সিঙ্গাপুরের কূটনীতিকদের। এ সময়ও যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ হয়। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জানিয়েছে, তারা প্রত্যাশা করছে, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুধু দেশের রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই নয়, বিশে^র প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে দ্রুত জাতীয় নির্র্বাচন অনুষ্ঠানের বার্তা উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দিন যত যাবে, দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের চাপ ততই বাড়তে থাকবে। শুধু রাজনৈতিক দলের তরফেই নয়, বিশ^ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও।

গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় ইংরেজি ভাষার টেলিভিশন উইঅন নিউজকে (ওয়ার্ল্ড ইন ওয়ান নিউজ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, আমেরিকা ও ভারত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায়। এতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে দেশটি তার পরবর্তী অধ্যায় শুরু করতে পারবে। আমেরিকা ও ভারত একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চায়।বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে আমেরিকা ও ভারতের মনোভাবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, যে সব রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাইছে, তারা আরও বেশি দাবি করবে। তারা মানুষকে বোঝাতে চাইবে যে, তাদের সঙ্গে বড় দুটো শক্তি আছে।বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, দেশে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে সংকট বাড়বে। একই সুর মিলছে বামপন্থি দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতেও। উপরন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও অনেকেই একই অভিমত ব্যক্ত করছেন। তবে তারা এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কারও প্রত্যাশা করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশিরা তাদের নিজস্ব মতামত, ধারণা দেবেন। আমাদের চিন্তাভাবনা হলো বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, অন্তর্বর্তী সরকার অনির্দিষ্টকাল ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সরকার জনগণকে কথা দিয়েছে, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমতা নিয়েছে। অতএব যত দ্রুত নির্বাচন করা যাবে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, তা এ সরকার এবং দেশের জন্য ততই মঙ্গলজনক।অবশ্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বলছে, ন্যূনতম সংস্কারে যেটুকু সময় প্রয়োজন, যৌক্তিক সে সময়টুকু নিয়ে সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও কিছু ইসলামিক দল ও সংগঠনও সংস্কারেই অধিকতর গুরুত্বারোপ করছে।অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দ্রুত নির্বাচন আমাদের জন্য ভালো হবে না। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এরপর নির্বাচন। ডিসেম্বর অথবা আগামী ফেব্রুয়ারির আগে বেসিক সংস্কারগুলো হবে না।

ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের রসায়ন প্রসঙ্গে ড. দিলারা বলেন, অনেকে মনে করেন এখনও আমেরিকা ও ভারত পৃথক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের দিকে তাকায়। আসলে তা নয়। যতদিন পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব থাকবে, ততদিন আমেরিকা ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একই সুরে কথা বলবে। ভারত ও আমেরিকা দ্রুত নির্বাচন চায়। চাইতেই পারে। কিন্তু এর আগে শেখ হাসিনা যে তিনটা নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) করল, সেগুলো তো নির্বাচনই হয়নি। তখন তো তারা কিছু বলেনি। আসলে ভারত যেটা চায় সেটাই আমেরিকা এখানে প্রয়োগের চেষ্টা করছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারত দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার কে? এসব হলো ভারতের দাদাগিরি। ভারত এখন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে কারণ তারা আগের অবস্থাকে ফেরত আনতে চায়। একইভাবে চীন যতদিন আমেরিকার শত্রু, ততদিন তারাও ভারতের সুরে কথা বলবে।সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ভারত ও আমেরিকা দুটোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তারা তত্ত্বগতভাবে চাইবে যে কোনো দেশে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারই থাকুক। এটা বলায় অসুবিধা দেখি না। আমাদের দেশের যেসব রাজনৈতিক দল আছে, তারাও নির্বাচন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা এবং অন্য দশটা দেশের বাস্তবতা এক নয়। এখানে একটা বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর আগে একটা গভর্মেন্ট ছিল যারা নিজেরাই নিজেদের বলত, নির্বাচিত সরকার । ভারতও তাই বলত। এ দেশের জনগণ কি একই কথা বলত? তিনি বলেন, ইলেকশন জনগণের অংশগ্রহণে হতে হয়। আমাদের দেশে সে ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এ বাস্তবতা না বুঝলে তো হবে না। তাদের (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র) এ বক্তব্য তাত্ত্বিকভাবে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন দেশ যেভাবে চলছে, সেটা ঠিক আছে।