NEWSTV24
নিঃশ্বাসে ঢুকছে বিষ
শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

বেড়েই চলেছে রাজধানীর বায়ুদূষণ। নির্মল বাতাসের পরিবর্তে রাজধানীবাসী প্রতিটি নিঃশ্বাসে গিলছে বিষ। ছুটির দিনে যানবাহন চলাচল কম থাকায় যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা কমে, সেখানে গতকাল শুক্রবার বায়ুদূষণের তালিকায় বিশ্বে প্রথম স্থানে ছিল ঢাকা। এতে ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে রাজধানীবাসীর। এদিকে বায়ুদূষণ রোধে পর্যাপ্ত আইন ও বিধিমালা থাকলেও, আসছে না কাক্সিক্ষত সাফল্য। গবেষকরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে প্রতিবছর শীতের সময় ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শীত শুরুর বেশ আগে থেকেই রাজধানীর বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং দূষণের দিক থেকে প্রায়ই প্রথম হচ্ছে। তাই ব্যক্তিগত সুরক্ষানীতির ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত বায়ুর মানমাত্রা নির্ধারণকারী সূচক যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) সূচকে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ঢাকা। ওই সময়ে ঢাকার বাতাসের দূষণের স্কোর ছিল ২৬৪, যা সকাল ৮টার দিকে ছিল ২৪২। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার বাতাসের মান বা একিউআই ২৬৯-এ উঠেছিল।

গবেষকদের মতে, মানের দিক বিবেচনা করলে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর। তারা বলছেন, চলমান মেগা প্রকল্প, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, নির্মাণাধীন স্থাপনা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ইটভাটা, বসতবাড়ি ও কলকারখানার বর্জ্যসহ নানাবিধ কারণে ঢাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। ঢাকার এমন বায়ু স্বাস্থ্যের ওপর নানান নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের ফলে নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, এলার্জিজনিত সমস্যা, সাধারণ সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা জ্বর, শ্বাসকষ্টের মতো বায়ুবাহিত রোগের প্রকোপও বেড়েছে। এসব রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে শিশু ও বৃদ্ধরা।রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে প্রতিদিন তেজগাঁও আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, সপ্তাহে ছয় দিনই বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ভাঙা সড়কে ধুলোবালির পরিমাণ এতটাই বেশি যে মাস্ক পরেও কাজ হয় না। নানা রকম এলার্জির সমস্যায় ভুগছি। প্রায় দিনই সর্দি, মাথাব্যথা লেগেই থাকে।

রাজধানীর বায়ুদূষণের কারণ নিয়ে গবেষণা করে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। তাদের তথ্য বলছে, গত নয় বছরে ঢাকাবাসী নির্মল বায়ু পেয়েছে মাত্র ৫০ দিন। দুর্যোগপূর্ণ বায়ু ছিল ৬০ দিন। গবেষণা বলছে, নির্মাণকাজ বা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ, শিল্পকারখানা বা ইটভাটা থেকে ২৯ শতাংশ, যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ, আন্তঃদেশীয় বায়ুপ্রবাহের কারণে ৯.৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। এ ছাড়া গৃহস্থালি ও রান্নার কাজ থেকে ৮.৫ শতাংশ এবং বর্জ্য পোড়ানোর কারণে প্রায় ৮ শতাংশ বায়ু দূষিত হয়ে থাকে।বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) আরেক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীতে ৪৬-৬৪ শতাংশ পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (অপরিশোধিত তেল পুড়ে তৈরি হওয়া রাসায়নিক) নির্গত হয় যানবাহনের ধোঁয়া থেকে। বিশেষ করে ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে এ ধরনের রাসায়নিক বেশি নির্গত হয়। এ ধোঁয়ায় রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কার্সিনোজেনিক বেনজো এ পাইরিন, যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী।এদিকে বায়ুদূষণ রোধে আইন ও বিধি থাকলেও নেই তার প্রয়োগ। যে কোনো ধরনের নির্মাণকাজের সময় বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে সেসব নিয়ম পালনের তোয়াক্কা করতে দেখা যায় না। ভবন নির্মাণের সময় বেষ্টনী দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দিনে কমপক্ষে দুইবার স্প্রে করে পানি ছিটানোর কথাও বলা আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনায়। এ ছাড়া নির্মাণাধীন রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা এবং নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন করার কথাও বলে অধিদপ্তর। তবে এসব নিয়ম কাগজে-কলমে থাকার মাঝেই সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।