NEWSTV24
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঘোষণা হবে হজ প্যাকেজ
বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:০৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

হজের আনুষ্ঠানিকতার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও আগামী হজের সেবা ফি নির্ধারণ করেনি। আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে এই ফি চূড়ান্ত করার পর চলতি মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ হজের ব্যয় প্যাকেজ ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। জোর চেষ্টা চলছে হজের ব্যয় কমিয়ে আনার। এ ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া ছাড়া তেমন কোনো খাত নেই, যে খাতে ব্যয় কমানোর সুযোগ আছে। তবে জাহাজে করে হজযাত্রা এবারও আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আগামী হজ মৌসুমের আগে জাহাজ পরিচালনার জন্য দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়া, অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করাটাও চ্যালেঞ্জের।আগামী বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। আগামী জানুয়ারিতে হবে হজ চুক্তি। এর আগে আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হবে নিবন্ধন।

হজের খরচ কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। হজ মুসলমানদের জন্য একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু হজের মতো পবিত্র কাজেও একটি সিন্ডিকেট কাজ করে। এ সিন্ডিকেট কারসাজি করে হজের প্যাকেজ মূল্য বাড়িয়ে তোলে বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।এ বিষয়ে গত ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি তখন বলেন, হজের ব্যয় কত হতে পারে, কত কমানো যেতে পারে, এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বর্তমান প্যাকেজ যে অনেক বেশি এবং সেই প্যাকেজ যে কমিয়ে আনা সম্ভব, সেটি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।গত বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কয়েক বছরে হজের খরচ অনেক বেড়েছে। চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে বিমান ভাড়া নির্ধারণ ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। যা সাধারণ সময়ের ভাড়ার দ্বিগুণ। এ নিয়ে কয়েক বছর ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, সাধারণ সময়ে ঢাকা-জেদ্দা বিমানের টিকিটের দাম ৭০-৯০ হাজার টাকা থাকে। অথচ হজের সময় বিমান কর্তৃপক্ষ দ্বিগুণ ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। এটি অযৌক্তিক। হজযাত্রীদের কাছ থেকে অযৌক্তিক বিমান ভাড়া আদায় করার জন্য একটি চক্র প্রতি বছর সক্রিয় থাকে। সেটি এখন বন্ধ করার সময় এসেছে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজযাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। বহনকারী সংস্থা বেশি হলে ভাড়া এমনিতেই কমে আসবে।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত (হজ অনুবিভাগ) সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, হজের ব্যয় প্যাকেজ নির্ধারণের জন্য আমাদের আগে সৌদি আরব অংশের ব্যয় জানা দরকার। এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটি নিয়ে সে দেশের সেবাদানকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে, যা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত হতে পারে বলে জেনেছি। এরপর আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করব হজে ব্যয় প্যাকেজ। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, হজের ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য বিমান ভাড়া কতটুকু কমানো যায় সেটা নিয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হবে। এরপর হজের প্যাকেজ নির্ধারণ করা যাবে। ফলে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে প্যাকেজ ঘোষণা করা যেতে পারে।বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও আলোচনায় আসছে জাহাজে করে হজযাত্রী পরিবহনের। এ বিষয়ে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএ রশিদ বলেন, জাহাজে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রস্তাব যাবে সৌদি আরবে। সৌদি সরকার নীতিগত অনুমতি দিয়েছে। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এটার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। দুই দেশে ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ অনেক বিষয় এতে জড়িত। এটা সরকারের ওপর নির্ভর করে যে, তারা কত তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত করতে পারে।সেবার মনোভাব নিয়ে তিনি জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছেন উল্লেখ করে এমএ রশিদ বলেন, এ খাতে বড় বিনিয়োগ, প্রায় এক হাজার কোটি টাকা লাগবে। এ জন্য আমরা সরকারের কাছ থেকে ঋণ সহযোগিতা চাই। বছরে হজের মৌসুম বাদে অন্য সময়ে তারা এই জাহাজ পর্যটনে ব্যবহারে আগ্রহী, জানান তিনি।এদিকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পরিবহন করা গেলে বিমান ভাড়া থেকে খরচ ৪০ শতাংশ অর্থাৎ এক থেকে দেড় লাখ টাকা কমবে। যেতে-আসতে আট দিন করে ১৬ দিন এবং হজ পালনসহ মোট এক মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে মধ্যবিত্তরা হজ পালনে আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন তারা।