NEWSTV24
শরতে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দেশ
সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৬ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

শরৎ ঋতুর প্রথম মাস ভাদ্রের শেষ দিন ছিল গতকাল। শরতের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও যেন বর্ষাই রয়ে গেছে। টানা বর্ষণে রাজধানীসহ সারাদেশে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় থমকে গেছে জীবনযাত্রা।চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন যেসব এলাকা আগে থেকেই বন্যাদুর্গত, সেসব এলাকার মানুষ। রাজধানীতেও দিনভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। অনেক এলাকায় জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ায় দু দিন ধরে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। ট্রলারডুবির ঘটনায় বিভিন্ন এলাকায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেক জেলে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোগান্তিতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, সাগরে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সীমানা ছাড়ছে। এই ধীরগতির ফলেই বৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে। তবে সোমবার থেকে বৃষ্টি অনেকটা কমতে পারে। আর মঙ্গলবার থেকে একেবারেই কমে যেতে পারে।চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের উপপ্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, আপাতত দেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি নেই। এই মুহূর্তে কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে নেই। পরিস্থিতি স্থিতিশীল।

গত ২০ আগস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে ছিল উজানের পাহাড়ি ঢল। এ দুইয়ের প্রভাবে ওসব অঞ্চলের অন্তত ১১ জেলায় বন্যা সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত হয় এলাকাগুলোর অর্ধকোটি মানুষ। আগের বন্যার ক্ষত না শুকাতেই নতুন করে বৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্ভোগ। ১১ ট্রলারডুবি, বহু জেলে নিখোঁজ কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে গতকাল রোববার ভেসে এসেছে আরও এক মরদেহ। ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহটি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ থাকা জেলের। এ নিয়ে তিন দিনে সৈকতে ভেসে এলো ছয়টি মরদেহ।বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় নোয়াখালীর হাতিয়ার ২৭ জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি। এখনও ঘাটে ফেরেনি ছয়টি ট্রলার। এসব ট্রলারের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যায়নি। গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত ১১টি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাগরে থাকা ট্রলারগুলো শতাধিক জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে। উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ঘাটের আড়তদার ও ট্রলার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা নদীতে মাছ ধরার দুটি নৌকা এবং সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে চারটি ট্রলারসহ শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া আরও একটি ট্রলার ডুবে গেলেও ওই ট্রলারে থাকা ১৭ জন মাঝি ও জেলে প্রাণে বেঁচে যান।সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বাঁধের ৭০ মিটার এলাকা। শনিবার সন্ধ্যায় কাজিপুর উপজেলার মেঘাই পুরাতন বাঁধে এ ভাঙন দেখা দেয় বলে জানান সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হোসাইন।

ফের বন্যার শঙ্কা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে এক মাস ধরে পানিবন্দি রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি কমতে শুরু করলে কিছুটা স্বস্তি দেখা দেয় বানভাসি ওই সব মানুষের মাঝে। এরই মধ্যে তিন দিন ধরে চলতে থাকা অব্যাহত টানা ভারী বর্ষণে এসব দুর্গত এলাকায় পানি আবার বেড়েছে। এতে করে ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।এদিকে তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বয়ে যাওয়া দমকা বাতাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে করে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তিন দিন ধরে পিরোজপুরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে শহর ও শহরতলির মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। এ ছাড়া অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়ারে নদীতে বেড়েছে পানির উচ্চতা। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ। টানা বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।ঝোড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সংযোগ তার ছিঁড়ে যাওয়ায় দুই দিন থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, রোববার পর্যন্ত জেলার ২ লাখ ৭৬ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবার বাইরে রয়েছেন।বরগুনার আমতলী ও তালতলীতে ভারী বর্ষণ এবং ঝড়ের তাণ্ডবে সহাস্রাধিক গাছপালা উপড়ে পড়াসহ অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়ায় ৩০টি স্থানের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ২৩ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুবিহীন অবস্থায় রয়েছেন আমতলী ও তালতলীর বাসিন্দারা। এতে আমতলী পৌর শহরের পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছেন শহরবাসী। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে শনিবার বেলা ১১টা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। আর প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করছে ফেরি। তবে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে।