NEWSTV24
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পরিবর্তনের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের
সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:২৬ পূর্বাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলটা বেশ বড়। ভেতরে পা রাখলেই ১১ তলা ভবন দুটি চোখে পড়ে। বাঁ দিকের ভবনটির নাম পদ্মা ব্লক। নিচতলায় হল সংসদ কক্ষ। ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে দেখা গেল, ঘরটা ফাঁকা পড়ে আছে। দেয়ালে-আসবাবে ভাঙচুরের চিহ্ন। একসময় এই কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আড্ডা দিতেন। তাঁদের ভয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই পথ মাড়াতেন না।

পদ্মা ব্লকেরই ৭০১০ নম্বর রুমটি ছিল ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার দখলে। সেখানেও আপাতত থাকছেন কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী। রুমের নতুন বাসিন্দাদের মধ্যে মো. রিপন খানের সঙ্গে কথা হলো। বললেন, ‘আমি ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। প্রথমে গণরুমে ছিলাম। ২০১৯ সালের দিকে হল প্রশাসন আমাকে এই কক্ষে বৈধ আসন বরাদ্দ দেয়। তখন চাইলেও এখানে উঠতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের একদম শেষ পর্যায়ে এসে নিজের বৈধ আসনে থাকতে পারছি, এতেই আমি খুশি।’

পাশের জসীম উদ্‌দীন হলের চিত্রও কিছুটা একই রকম। ২০৮ নম্বর রুম এত দিন ছাত্রলীগের একটি অঞ্চলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজনৈতিক বিবেচনায় সেখানে কিছু শিক্ষার্থীকে থাকতে দেওয়া হতো। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, চারটি বিছানায় আপাতত থাকছেন সাত শিক্ষার্থী।

জুলাই বিপ্লবের পর

সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন মলিন মুখেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবার শিক্ষার্থীরা ফিরতে শুরু করেন। অতিথিকক্ষগুলো আগে শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল এক রকম আতঙ্ক। এখন পরিবেশ বদলেছে।

হলগুলোতে অমানবিক ‘গেস্টরুম কালচার’ (‘ম্যানার’ শেখানোর নামে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন), ‘গণরুম কালচার’ ছিল বহুদিন ধরে। হলের খাবারের দোকান ও ক্যানটিনে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, এসবও বহু পুরোনো রীতি। ছাত্র-জনতার ‘জুলাই বিপ্লব’–এর পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সেই ‘হাওয়া’ এসে লেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও। নানা ‘পরিবর্তনের’ সুর শোনা যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল আছে মোট ১৯টি। এর মধ্যে ১৪টি হল ছাত্রদের, ৫টি ছাত্রীদের। সব হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। নতুন করে আসন বণ্টন করা হলে সব বৈষম্যের অবসান হবে, আশায় আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে এরই মধ্যে আসন বণ্টন সম্পন্ন হয়েছে। এই হলের বাসিন্দা, শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বললেন, ‘হল খোলার পর কয়েকটি পরিবর্তন চোখে পড়েছে। এর মধ্যে সুষমভাবে আসন বণ্টন হওয়াটা উল্লেখযোগ্য। গণরুম, গেস্টরুম কালচারের সঙ্গে হলের শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই কালচার এখন নেই।’

শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরেছে বলেও মনে করেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘হলের ভেতরে কোনো সমস্যা হলে আগে কেউ মুখ ফুটে বলতে পারত না। ছাত্রলীগের ভয় ছিল। সেই ভয় এখন কেটেছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারছে। হলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত দাদুরা এখন আগের চেয়ে বেশ নরম গলায় কথা বলছেন। হলের নিরাপত্তাও জোরদার হয়েছে।’

মূল ক্যাম্পাস থেকে কিছুটা দূরে নারী শিক্ষার্থীদের দুটি হল—বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। আসনসংকট ছিল এই দুটি হলের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বৈধ সিট নিশ্চিত করতে হল প্রশাসন এখন কিছুটা তৎপর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। হলের দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক বা হাউস টিউটরেরা নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন।’