NEWSTV24
সংঘাতের মধ্যেও মিয়ানমার থেকে আসছে গরু-মহিষ
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ১৪:৫৯ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত চলমান। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে কড়া পাহারায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপরও রামু, চকরিয়া, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, ফুলতলী, লম্বাশিয়া, ভাল্লুক খাইয়া, চাকঢালা ও দৌছড়িসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে শত শত গরু-মহিষ আসছে বাংলাদেশে।অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মদদে দুই দেশে গরু-মহিষ ছাড়াও মাদকদ্রব্য পাচার করছে চোরা কারবারিরা। গরু চোরাই কারবারে মুনাফা বেশি হওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এখন ছুটছেন সীমান্তের চোরাই পথে। মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে কর্তব্যরত সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্যদের মাথাপিছু ৫০০ টাকা দিয়ে গরু-মহিষ বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। সীমান্তের এপারেও সবাইকে ম্যানেজ করে গরু-মহিষ বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। আর এ কাজে একাধিক সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাত-দিন কাজ করছে। চোরাপথে এভাবে পশু পাচার করতে গিয়ে কেউ কেউ সীমান্তরক্ষীদের গুলির মুখে পড়ছেন, আবার কেউ কেউ দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হচ্ছেন।

সীমান্ত গলিয়ে চোরাই পথে মহিষ পাচার করতে গিয়ে সর্বশেষ গত রবিবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ৪৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের জারুলিয়াছড়ি সীমান্তে শূন্যরেখা থেকে কিছু ভেতরে মিয়ানমারের ভূখণ্ডের স্থলমাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি আহত হন। তারা হলেন- রশিদ উল্লাহ, মোহাম্মদ মফিজ উল্লাহ ও মো. আব্দুল্লাহ। তাদের সবার বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভীকাটা গ্রামে। এদের মধ্যে মাইন বিস্ফোরণে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। অন্য দুজনের হাত, বুক ও মুখ ঝলসে গেছে।এর আগের দিন (গত শনিবার) রাতেও একই এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে আহত হন আরও ২ বাংলাদেশি। তারাও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তের ওপার থেকে গরু আনতে গিয়েছিলেন। মিয়ানমারে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সে দেশের সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তারা আহত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর যুদ্ধ চলার কারণে দুপক্ষই সীমান্ত এলাকায় অ্যান্টিপার্সোনাল মাইন বা স্থলমাইন পুঁতে রেখেছে। এ পর্যন্ত ৩২ মাইন পুঁতে রাখার তথ্য মিলেছে। সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত থাকা লোকজন এসব এলাকা ব্যবহার করতে গিয়ে প্রায়ই বিস্ফোরণের কবলে পড়ে হতাহত হচ্ছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।গতকাল মঙ্গলবার পঙ্গু হাসপাতালে আহত আবদুল্লাহ বলেন, তিনি দিনমুজরের কাজ করেন। ৪ বছর ধরে মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ পাচারের কারবার চললেও একটু ভালো থাকার আশায় ২ বছর আগে এই কাজে যোগ দেন। দিনমজুরি করলে দৈনিক হাজিরা পাওয়া যায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সেখানে মিয়ানমার থেকে একটি গরু-মহিষ বাংলাদেশে এনে মহাজনের হাতে তুলে দিলে মেলে ২ হাজার টাকা। মিয়ানমারে বেলাল মহাজনের কেনা ২২টি মহিষ আনতে গত শুক্রবার রাতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের জনপ্রতি ৫০০ টাকা দিয়ে সেই দেশে প্রবেশ করেন আব্দুল্লাহসহ ২৫ জন। গরু হাতে পেয়ে ২৫ জনই শনিবার রাতে ফুলতলী সীমান্তের ৪৭ নম্বর পিলার সংলগ্ন স্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় কাঁটাতারের কাছাকাছি পৌঁছালে হঠাৎ একটি মাইন বিস্ফোরণে তাদের বহরের ২ জন আহত হন। ফলে সেই রাতে অন্যরা যাত্রা বিরতি দেয়।