দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিএনপি নেতাদের তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী চার ধাপে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় এই দুই ধাপে ১৪১ জন নেতা বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কার ও শোকজ করেও নির্বাচন থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ফেরানো যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের লোভ-লালসা, নেতাদের আদর্শহীনতা, ক্ষোভ-হতাশা, এলাকার প্রভাব ধরে রাখা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ব্যর্থতা- এসব কারণে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা বড় হচ্ছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।এই নেতাদের মধ্যে আদর্শবোধ বলতে কিছু নেই। এরা মূলত শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করছে, আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের হাতকে শক্তিশালী করছে। উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা অংশ নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বা হচ্ছেন, তাদের অনেকেই সক্রিয় রাজনীতি করেন না। এরা এলাকায় টিকে থাকতে ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় প্রার্থী হয়েছেন। এদের কেউ কেউ নিজেদের স্থানীয় প্রভাব ধরে রাখতে প্রার্থী হয়েছেন। হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার হওয়ার পরও দল থেকে খোঁজখবর না নেওয়ার কারণেও অনেকে ক্ষোভ থেকে প্রার্থী হয়েছেন।দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম দফার নির্বাচন প্রার্থী হওয়ায় ৮০ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য ৬১ জন নেতা এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১৬। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাদের গতকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে কারণ দর্শানো চিঠি দেওয়া হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বিতীয় দফায় যেসব নেতা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কারণ দর্শানো চিঠি পেয়েছেন, তারা যদি এর মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারেন বা এর মধ্যেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করেন, তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে।
বহিষ্কার ও শোকজের পরও কেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে ফেরানো যাচ্ছে না জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, সরকারের লোভ-লালসায় পড়ে দলের এসব নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য পর্যালোচনা করলেই তা বোঝা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা চায়, উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে। কিছু মানুষকে লোভ দেখিয়ে চাপ দিয়ে প্রার্থী করা গেলেও ভোটারা কেন্দ্রে যাবে না। দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে বিএনপিকে। তবে বহিষ্কারের তালিকা বড় হওয়ার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন দীর্ঘমেয়াদে আরও দুর্বল করবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। দ্বিতীয় ধাপেও এতসংখ্যক নেতার ভোটে অংশগ্রহণে দায়িত্বশীল বা স্থানীয় নেতাদের কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা-তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভোটবর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্তের ভালো-খারাপ উভয় দিক আছে।বিএনপি নেতাদের একাংশ মনে করেন, আন্দোলনে ব্যর্থতার হতাশা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বড় অংশকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। কিন্তু জনসমর্থন আছে, মাঠের এমন নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর বা একটা অবস্থান তৈরির একটা সুযোগ এসেছিল উপজেলা নির্বাচনে।তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক মনে করেন, বিএনপি সিদ্ধান্তটা ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বহাল রেখেছে। মাঝে তো ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটে গিয়ে একটা অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিলাম। সেই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু উত্তীর্ণ হওয়ার পথে বাধা হলো আওয়ামী লীগ।