ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৩ হাজার। ইসরায়েলের এই হামলায় নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের শঙ্কা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৯১ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ২৪ হাজারের বেশি। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বুধবার জানায়, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৯২২টি গণহত্যা চালিয়েছে। আর এর জেরে গাজায় মোট ১৪ হাজার ৫০০ শিশু এবং ৯ হাজার ৫৬০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৭ হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বা নিখোঁজ রয়েছেন।
মিডিয়া অফিস আরও বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া গাজায় ১৭ হাজার শিশু তাদের পিতামাতা বা উভয়ের যেকোনো একজন ছাড়াই বসবাস করছে। গাজার অনাহারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিডিয়া অফিস বলেছে, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ৪৮৪ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, ১৪০ জন সাংবাদিক এবং ৬৫ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মীও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
গুরুতর অসুস্থ এবং বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন- এমন আহতদের সংখ্যা ১১ হাজার এবং ১০ হাজার ক্যান্সার রোগী অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী ৩১০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং ১২ জন সাংবাদিককে আটক করেছে এবং গাজা উপত্যকায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাজায় প্রায় ৭০ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও ২ লাখ ৯০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে ২৯৭টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেও জানিয়েছে মিডিয়া অফিস। এর মধ্যে ২২৯টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তিনটি গির্জায়ও তারা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত থাকার কারণে সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যদের হামলায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সাতজন সাহায্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অনেক ফিলিস্তিনিই এখন আশঙ্কায় আছেন যে, তারা কীভাবে তাদের পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবেন।
এই সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করা অন্য একটি দাতব্য সংস্থা আনেরা। নিজেদের স্টাফ এবং তাদের পরিবারের লোকজনের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় আনেরাও জানিয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। ফিলিস্তিনজুড়ে সপ্তাহে ২০ লাখ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে এই দুই সংস্থা। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা, চলমান আগ্রাসন এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গাজার অর্ধেক জনসংখ্যা চরম খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
এদিকে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল সতর্ক করেছে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সঙ্গে যা ঘটেছে তা পুরো ত্রাণ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। গাজায় ত্রাণ সংস্থার কর্মীদের প্রতিটি গাড়িকে সুপরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেজ।
সোমবারের হামলায় সংস্থাটির সাত কর্মীকে হত্যার ঘটনা সাধারণ কোনো ভুল ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীকে বারবার তাদের গতিপথ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। ডব্লিউসিকের ফিলিস্তিনি কর্মীদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরাও ইসরায়েলের এ হামলায় নিহত হয়েছে। ইসরায়েল অবশ্য বলছে, হামলার ঘটনাটি ছিল ‘মারাত্মক ভুল’ এবং এ জন্য দেশটি দুঃখ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে দেশটি এ ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার অঙ্গীকার করেছে।
ডব্লিউসিকের একটি বহর সোমবার রাতে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করার সময় হামলার শিকার হয়। তারা দেইর আল-বালাহর একটি গুদাম থেকে ১০০ টনেরও বেশি খাবার নিয়ে যাত্রা করেছিল। তারা ইসরায়েলের নির্ধারণ করে দেওয়া উপকূলীয় রুট দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তারপরেও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।