NEWSTV24
কথার ফাঁদে পড়লেই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা
বৃহস্পতিবার, ০২ জুন ২০২২ ১৪:১৮ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

২৫ মে, সন্ধ্যা ৬টা। রাজধানীর কাকরাইলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের কাছে যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইশরাত জাহান ইরা। মায়ের অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন ইরার মোবাইল ফোনে ০১৮১০৯৬৮৭৬৯ নম্বর থেকে কল আসে। তাকে জানানো হয়, তার বিকাশ আইডি ব্লক হয়েছে। তিনি বিকালে যে ৩০৬০ টাকা ক্যাশ ইন করেছেন সেটি তুলতে পারবেন না। বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করলে তিনি যেন সহযোগিতা করেন। এর পর ০১৮৪৩০৩৯৪৬৩ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারের পরিচয় দিয়ে কথার ফাঁদে ফেলে পিন নম্বর নিয়ে দুই দফায় ২৩ হাজার ৭৬২ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। শুধু ইরা নন, প্রতিদিন শত শত মানুষ এভাবে মোবাইল ব্যাংকিং, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন।সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হয়, প্রতারণার কারণে গ্রাহকের গড়ে ৯ হাজার ২১৯ টাকার লোকসান হয়। অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন সিম থেকে বেশির ভাগ প্রতারণা হয়।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিচিত নম্বর থেকে আসা প্রতারকদের কথার ফাঁদে পা দিলেই সর্বনাশ। প্রতারক সরাসরি বা কৌশলে পিন নম্বর ও ওটিপি হাতিয়ে নিয়ে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে ফেলবে। প্রতারণার কাজে ব্যবহার হওয়া সিমের নিবন্ধন থাকে অন্যদের নামে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার কাজে ব্যবহার হওয়া সিমকার্ড ভাড়া নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ভিক্ষুক, দিনমজুর আর নিম্ন আয়ের মানুষের নামে সিমকার্ডের নিবন্ধন করা হয়। সিমকার্ডের সূত্র ধরে প্রতারণার কাজে ব্যবহার হওয়া সিমের মালিককে গ্রেপ্তার করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল প্রতারক থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং ও অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণাও বেড়েছে। বিকাশ-নগদের প্রতারকরা এখন ব্যাংক লেনদেনের অ্যাপস ও এটিএম কার্ড থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রতারণার দিকে ঝুঁকছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মধুখালী, মাদারীপুরের শিবচর, রাজৈরের কয়েকটি গ্রাম এখন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার মূল কেন্দ্র। ইমো প্রতারকদের কেন্দ্র নাটোরের লালপুর। তবে সারাদেশেই এসব প্রতারক ছড়িয়ে রয়েছে।তিনি আরও বলেন, প্রতারকচক্র কাস্টমার কেয়ারের কাছাকাছি ফোন নম্বর, একটি ডিজিট এলোমেলো করে কিংবা নম্বরের সামনে একটি প্লাস যুক্ত করে গ্রাহকদের ফোন দেয়। এসব প্রতারণা  থেকে বাঁচার প্রধান উপায় সচেতন হওয়া। বিকাশ-নগদ কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক চাইলেও পিন নম্বর এবং ওটিপি দেওয়া যাবে না। কারণ এটা তারা কখনই চাইবে না। এগুলো একজন গ্রাহকের নিজস্ব ও গোপনীয় সম্পত্তি।

ফরিদপুরের এক প্রতারকের সঙ্গে কথা হয় আমাদের সময়ের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, গড়ে ৭-৮ জনকে ফোন করলে একজন প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়। বিকাশের আইডিতে ঢুকে তারা সাধারণত গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন। প্রতারণার পদ্ধতি অনেকটা একই হওয়ায় এখন তারা ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপস ও এটিএম কার্ডে প্রতারণার দিকে ঝুঁকছেন। এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিটি অ্যাকাউন্ট থেকে গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন। প্রতারণার জন্য ব্যবহার করা সিমকার্ড তারা ভাড়া করেন। এ ক্ষেত্রে তারা দিনমজুর, ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষের নামে নিবন্ধিত সিম ভাড়া নেন।জানা গেছে, বিকাশ প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের একটি বড় অংশের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার মামলাগুলোর আসামিরা ভাঙ্গা উপজেলার বেশি। এসব গ্রামের লোকজন এই প্রতারণাকে অপরাধ বলে মনে করে না। কিশোর থেকে বৃদ্ধ- সবাই এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। ফলে এসব এলাকা থেকে পুলিশ কোনো তথ্যও পায় না।

সম্প্রতি ঢাকার বনশ্রীতে ৪৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে প্রতারিত হন সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পুলিশ জানায়, তাকে যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল তার নিবন্ধন একজন নিরীহ মানুষের। আর যে বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় তার নিবন্ধন রাজবাড়ীর এক ভিক্ষুকের নামে। প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটি নম্বর চিহ্নিত করে তাদের ধরতে পারলেও মূল প্রতারকদের ধরতে পারেনি পুলিশ।