NEWSTV24
সবার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১ ১২:৩৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এমন অবস্থানকে সমর্থন করলেও লকডাউনের প্রভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, কত মানুষ বেকার হবে এবং সরকারি চাকরিজীবীর বাইরে সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের সংসারের ব্যয় বহন করবে তা ভেবে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া কঠোর লকডাউনের প্রাক্কালে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে এমন আবেদন জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা।শনিবার তাদের অনেকে বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পোন্নত ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কঠোর লকডাউন আরোপ করে সার্বিক অর্থনীতির চাকাকে কিভাবে সচল রাখা হবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এদের বেশিরভাগই দিন আনে, দিন খায়। মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতেই বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হলে এদের বেতন-ভাতায় আঘাত আসে। চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই। আছে ব্যাংকের দায়-দেনা ও কিস্তি পরিশোধের চাপ। দায়িত্বশীল মহল থেকে এসব প্রশ্নের সঠিক জবাবও আসতে হবে। ফলে কঠোর লকডাউন আরোপিত হলে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় মোটা দাগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একেবারে রাস্তার ভিক্ষুক থেকে সমাজের উচ্চবিত্ত শিল্পপতিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। যে যত বড়, তার ক্ষতির পরিমাণ তত বেশি হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার বলেন, করোনাকালীন আর্থিক প্রণোদনা সহায়তার ব্যাপারে আগের অবস্থানেই আছে সরকার। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু করোনা এখনও শেষ হয়নি। যেহেতু নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রণোদনাসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা বহাল থাকবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তিনি বলেন, এর আগে প্রণোদনা ঋণের বড় অংশ পেয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা। কারণ তারা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট। তাদের সহজে খুঁজে বের করা যাবে। সে বিবেচনায় এবারও সরকার এগিয়ে আসবে। তবে এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। শ্রমিকরা যাতে চাকরিচ্যুত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে।এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ শনিবার বলেন, এই লকডাউন অর্থনীতিকে লন্ডভন্ড করে দেবে। আর অর্থনীতির বিপর্যয় ডেকে আনলে সব খাত বিপদে পড়বে। ভিজিলেন্স বা চলমান অর্থনীতি যারা পড়েছেন, এমন কেউ লকডাউনের পক্ষে কথা বলবেন না। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ব্যাংক বিপদে পড়বে, শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নিু আয়ের মানুষের আয় বন্ধ হবে, শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও কমবে।

তিনি আরও বলেন, আমার অত্যন্ত দুঃখ লাগে যে, টেলিভিশনে কেউ কেউ লকডাউনের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তাদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, এক সপ্তাহ পর কী করোনা দেশ থেকে চলে যাবে। যদি না যায়, তবে অর্থনীতির গতি থামিয়ে দেওয়ার মানে কী? এর দায় কে নেবে? ওইসব লোকদের আমি বলতে চাই, আগে অর্থনীতি বোঝেন, পরে মন্তব্য করেন। কিন্তু লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তে পুরো দেশের অর্থনীতি এবং আর্থসামাজিক খাতে কী প্রভাব পড়বে, উনারা সেটি ভাবেন না। সামনে ঈদ চলে আসছে। সব খাতের মানুষের এ সময়ে আয় বাড়ে। আর ঈদকে সামনে রেখে সব উদ্যোক্তাই যার যার জায়গা থেকে নতুন বিনিয়োগ করেছেন। কারণ প্রতি বছর এ সময়ই অর্থনীতির গতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সময়। আর গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে লকডাউন দিয়ে অর্থনীতির ক্ষতি করার মানে কী?ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট অনেকে অধ্যাপক আবু আহমেদের মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। কেননা লকডাউনের প্রভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে। এতে উদ্যোক্তারা যেসব পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করছেন বা করবেন, সেগুলো বিক্রি করা সম্ভব হবে না। রপ্তানিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বায়ারদের অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাংক থেকে সুদের হিসাব কষা থামবে না। এ করোনার মধ্যেও ঋণের কিস্তি ঠিকই দিতে হচ্ছে। এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় ধাক্কা।

এদিকে এ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অফিস ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও মেটাতে হচ্ছে। সামনে আসছে ঈদ। সেখানে সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধের বড় চাপ তো অপেক্ষা করছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেখানে করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি এখনও উদ্যোক্তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি; সেখানে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়ে গেছে। ফলে সব কিছু তছনছ হতে বসেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এ ধাক্কার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে এবং সরকার যদি উদ্যোক্তাদের পাশে শক্তি সামর্থ্য নিয়ে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয় তাহলে সবার পথে বসার উপক্রম হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাবে।এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি অর্থনীতিকে সচল না রাখারও কোনো বিকল্প পথ নেই। তারা মনে করেন, করোনার প্রকোপ থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে হলে যেমন কঠোর লকডাউনের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি সামগ্রিক অর্থনীতিসহ কোটি কোটি মানুষের সংসার বাঁচাতে কার্যকর কিছু একটা করতে হবে। ফলে সরকারকে এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করে মানুষের জীবন ও জীবিকার সমাধানে ভূমিকা রাখতেই হবে।