রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ভবনে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। কোনোটি ধসে পড়ছে, কোনোটিতে ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, কোনোটি আবার হেলে পড়ছে। দুর্ঘটনার পর ওই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। আদতে রাজধানীতে কত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এর প্রকৃত হিসাব কারও কাছে নেই। রাজউক বলছে, রাজধানীতে অন্তত ৯০ শতাংশ ভবন তৈরির ক্ষেত্রে নকশার ব্যত্যয় ঘটছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হচ্ছে না। এসব ভবন কোনো না কোনোভাবে ঝুঁকির মধ্যে আছে।ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হিসাব নেই : ২০১৮ সালে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন রাজধানীতে ৩২১ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজউক জানিয়েছিল, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ১৫৫। ২০১৬ সালের ১৭ মে ফায়ার সার্ভিসের তৎকালীন মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান জানান, নগরীতে ১১০ ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগে ২০০৯ সালে এক জরিপের বরাত দিয়ে রাজউক জানিয়েছিল, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন প্রায় ৭২ হাজার। সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরে সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-পুলিশ স্টেশনের ভবনগুলোর ওপর জরিপ চালায়। এতে ৩ হাজার ২৫২ ভবনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৮৭ ভবন পাওয়া যায়, যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ করা সম্ভব। আর ৪২টি ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে সেগুলোকে অপসারণ করার কথা বলা হয়।
আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ও রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ড. আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, ঢাকা শহরের সব ভবনেরই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা দরকার। এটি করতে অনেক সময় ও অর্থের দরকার। আমরা কাজটা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব ভবনেরই মূল্যায়ন করা হবে। তখন জানা যাবে প্রকৃত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কত।রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক সমকালকে বলেন, রাজউকের অ্যাসেসমেন্টে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এগুলো যেহেতু সবই সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন, কাজেই তারা ব্যবস্থা নেবে বলে রাজউক মনে করে। ঢাকা শহরে ২১ লাখ স্থাপনা আছে। এর মধ্যে ৫ লাখ দালান। এগুলো তদারকি করার মতো জনবলের ঘাটতি আছে। রাজউকের পক্ষে রাতারাতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে ফেলা সম্ভব না।নকশার বাইরে অনেক ভবনে অতিরিক্ত তলা বাড়ানো হয়েছে। তলা বাড়ালে কলামের ওপর লোড বেড়ে যায়। অনেকে ভবনের চারপাশ বাড়িয়ে নেয়। এমনকি ফায়ার এপিট সিঁড়ি নকশা অনুযায়ী না করে সরু করে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে সেই সিঁড়ির দরজা সব সময় বন্ধ করে রাখে। অনেকে ভবনে অগ্নিনির্বাপক সামগ্রী রাখে না। এ রকম অনেক কারণেই ভবনগুলো ঝুঁকিতে পড়ে।