ঈদযাত্রায় মহাদুর্ভোগের আশঙ্কা তৈরি করেছে মহাসড়ক। উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে তিনটি ফ্লাইওভার ও একটি সেতু চালু হলেও ভোগান্তি খুব একটা কমেনি বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে চলমান উন্নয়নকাজের কারণে। চার লেনে উন্নীত হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই সেতুতে টোলের দীর্ঘ লাইন এবং রাস্তায় বসা বাজার ভোগাচ্ছে।অন্যদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের কারণ হবে গাজীপুরে চলমান উন্নয়নকাজ। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখনও দুই লেনের, ফলে যানজটই নিয়তি। আর খুলনা ও বরিশালের পথে ভুগতে হচ্ছে ঘাটে। গত মঙ্গলবার থেকেই মাওয়া ও আরিচায় ফেরি পার হতে কয়েক ঘণ্টা লাইন ধরতে হচ্ছে যানবাহনকে। মহাসড়কে ওঠার আগে ঢাকার প্রবেশপথের যানজটও ভোগাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটি শুরুর সন্ধ্যা থেকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গার্মেন্ট, কলকারখানা ছুটি হবে শুক্র ও শনিবার। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর বহু মানুষ প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারেননি ঈদে। সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসায় এ বছর অনেক বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ট্রেন, বাস, লঞ্চের টিকিটের জন্য হাহাকার বলছে, এবার গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামবে। গবেষণাও বলছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ মানুষ এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা ছাড়বে।
ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ হবে না- সরকারের তরফ থেকেও এমন কথা বলা হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলাম বলেছেন, যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঈদযাত্রার চাপ শুরু হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতে দৈনিক ১৫-১৬ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। আগের চব্বিশ ঘণ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৫ হাজার ৪৫০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। গত বছর লকডাউন থাকলেও ঈদযাত্রায় এক দিনে রেকর্ড ৫২ হাজার ৭৬৮টি গাড়ি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েছিল। এবার এ সংখ্যা আরও বাড়বে। ফলে তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী জানান, স্বাভাবিক সময়ে ছয় থেকে সাতটি বুথে টোল আদায় করা হয়। ঈদে যানজট এড়াতে ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হবে।জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত হলেও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখনও দুই লেন রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ থাকায় গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। খানাখন্দে কুচি পাথর ছিটিয়ে দায় সারছে সেতু কর্তৃপক্ষ। কুচি পাথর দেওয়ার ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, যানজট ঠেকাতে এই ১৩ কিলোমিটার সড়কে ওয়ানওয়ে করা হচ্ছে। শুধু উত্তরবঙ্গগামী গাড়ি চলবে এতে। ঢাকামুখী গাড়ি সেতু পার হয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গায় আসবে। এতে যানজট কমবে।বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই উন্নয়নকাজই ভোগাচ্ছে। সিরাজগঞ্জে নলকা সেতুর উত্তরবঙ্গমুখী লেন খুলে দেওয়া হলেও হাটিকুমরুল মোড় হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার পথে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু সংস্কারকাজ হলেও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে তা বেহাল হয়ে পড়তে পারে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে মুলিবাড়ী থেকে কড্ডা পর্যন্ত মহাসড়কে এখনও এবড়োখেবড়ো। কড্ডায় উত্তরবঙ্গমুখী গাড়ির রাস্তা রাখার জন্য বলা হলেও তা করা হয়নি। সাহেবগঞ্জ বাজারে আরসিসি রাস্তার সংযোগস্থলও এবড়োখেবড়ো।সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, সব গর্ত ভরাট করা হয়েছে। ভাঙাচোরা মেরামত করা হয়েছে।