রাঙামাটিতে সড়ক ও নৌপথে অবরোধ চলছে কক্সবাজারের রেলপথ অনিরাপদএফডিসির ঘটনায় ডিপজল-মিশা সওদাগরের দুঃখ প্রকাশপ্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেনগরমের তীব্রতা কমাতে কী কাজ করেছেন, জানালেন হিট অফিসার
No icon

পেমেন্ট গেটওয়েতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের টাকাও আটকে

গ্রাহকদের পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার কয়েক মাস পরও অর্থ না পাওয়ায় এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে, তেমনি তাদের পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টগুলো রয়েছে বেকায়দায়। পেমেন্ট গেটওয়েগুলো থেকে যথাসময়ে টাকা বুঝে না পাওয়ার এমন অনেক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি ই-ক্যাব। এক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, গ্রাহক পণ্য বুঝে পেল কি না তা যাচাইয়ের পর ই-কমার্স কোম্পানির কাছে পণ্যের দাম পৌঁছে দেওয়ার নতুন নিয়ম অনুসরণ করতে গিয়েই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ই-কমার্সে প্রতারণা, অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর গ্রাহকের সুরক্ষায় অনলাইন কেনাকাটার অর্থ পরিশোধে পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করা হয়। নিয়মের গ্যাড়াকলে পড়ে এখন উল্টো ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কয়েক শত কোটি টাকা আটকে পড়েছে। ই কমার্স: পণ্য হস্তান্তর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, জানাতে হবে ক্রেতাকে

গত ৪ জুলাই নতুন এই নিয়ম চালু করা হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাসের পর মাস পণ্য সরবরাহ না করার অসংখ্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা তৈরি করে।

এ নির্দেশিকা অনুযায়ী, গ্রাহক সরাসরি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে টাকা দেবেন না। তাদের জমা দেওয়া অগ্রিম অর্থ থাকবে পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে। আর গ্রাহকের টাকা জমা দেওয়ার সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রাহক পণ্য বুঝে পেয়েছে এই নিশ্চিয়তা পাওয়ার পরই শুধু কোম্পানিগুলোর অধিকারে টাকা পাঠাতে পারবে পেমেন্ট গেটওয়েগুলো।

আলেশা মার্ট, কিউকুমসহ অন্তত ১৬টি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ইক্যাবের কাছে পেমেন্ট গেটওয়ে তাদের টাকা আটকা থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছে। ইক্যাবের মহাসচিব আব্দুল ওয়াহেদ তমাল  বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে গেলে একটি সমস্যার সমাধান হয়ে আরেকটি সমস্যার জন্ম দেবে। এখন বাস্তবে সেটাই হতে চলেছে।

সংগঠনের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, কিউকুম নামের একটি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম ৪০০ কোটি টাকা গেটওয়েতে আটকা পড়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশনকে লিখিত আকারে জানিয়েছে। এমনকি গত জুলাই মাসে পণ্য ডেলিভারি করা হয়েছে এমন কিছু টাকা এখনও আটকে আছে বলে ইক্যাবকে জানায় কিউকুম।

কিউকুম লিখিত আকারে জানালেও বাকিরা জানিয়েছে মৌখিক। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকেই ইক্যাবের সদস্য নয়।ইভ্যালি, কিউকুম, আলেশামার্ট, ধামাকা, ইঅরেঞ্জ, দালাল প্লাসসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে মাসের পর মাস পণ্য দিচ্ছে না-এমন অভিযোগ নিয়েই এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে।

এরমধ্যে ইভ্যালি, ধামাকা, ইঅরেঞ্জের মালিকরা ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এসেছে। বাকিদেরকে নজরদারিতে রেখেছে প্রশাসন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস গেটওয়ের ডিজিএম রাফেজা আক্তার বলেন, জুলাই থেকে গ্রাহক পণ্য বুঝে পেয়েছে কিনা সেটা এখন ম্যান্যুয়াল পদ্ধতিতে যাচাই করা হচ্ছে। একারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেমস থেকে টাকা সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন গেটওয়েগুলো কাস্টমারকে এসএমএস করে, ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারপর টাকাটা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ ফোন ধরছে কেউ ধরছে না। এধরনের অনেক ছোটখাটো সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টা নতুন এখনও স্বয়ংক্রিয় কোনো সিস্টেম এখানে দাঁড়ায়নি। কিন্তু টাকা আটকে রেখে বা টাকা দিচ্ছে না এই কথাটি সঠিক নয়।

বর্তমান সিস্টেমে কিছু ক্ষেত্রে একটু ডিলে হতে পারে। কারণ তাদেরকে ডেলিভারি রিপোর্টটা ভেরিফাই করতে হয়। ভেরিফাই করে ভালো রিপোর্ট পেলেই কেবল টাকাটা ছেড়ে দেয়। ভেরিফাই করতে গিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট পেলে সেই টাকাটা আটকিয়ে রাখে।

তবে জুলাইতে চালু এই পদ্ধতির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এখন যাচাইয়ের এই ম্যানুয়াল পদ্ধতির জায়গায় নতুন কোনো প্রযুক্তি প্রবর্তনের বিষয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরের (পিএসও) ভাবার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, কাস্টমার পণ্য বুঝে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন সেটা কনফার্ম করতে পারে যে, আমি পণ্য পেয়েছি এবং সেই বার্তা যেন সাথে সাথে পিএসওর কাছে চলে যায়। যতদিন না এটা অটোমেটেড সিস্টেমে যাবে সমস্যার সমাধান হবে না।

দীর্ঘ সময় পরও পণ্য কিংবা অগ্রিম অর্থ ফেরত না পাওয়ায় গুলশানে ই-অরেঞ্জ অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়ে পিএসও মূলত পেমেন্ট গেটওয়ে সেবা দেয়। এদের মাধ্যমে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা ইন্টারনেটে ব্যবহার করে তাদের পণ্য/সেবার মূল্য গ্রহণ করতে পারে।

পিএসওর অবকাঠামো ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো কার্ড ও এটিএম লেনদেনও পরিচালনা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আইটি কনসালট্যান্টস, এসএসএল কমার্জ, সূর্যমুখী, প্রগতি সিস্টেমস ও পোর্টোনিক্স লাইসেন্স নিয়ে পিএসও হিসেবে কাজ করছে।