চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারিআমিরাতে বৃষ্টিতে গাড়িতে আটকা পড়ে মারা গেলেন দুই জন সেরেলাক-নিডোয় অতিরিক্ত চিনি, পরীক্ষা করবে বিএফএসএজাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্রভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু
No icon

২৫২৩০ কোটি টাকার আয়কর অনাদায়ি

প্রায় ২৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা আয়কর অনাদায়ি পড়ে আছে। মূলত প্রকৃত আয় গোপন ও ব্যবসায় লোকসান দেখিয়ে গত ৯ করবর্ষে (২০১১-১২ থেকে ২০১৯-২০ এর অক্টোবর পর্যন্ত) এ কর ফাঁকি দিয়েছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, মোবাইল অপারেটর, প্রথম সারির ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা।কর অফিস ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন অডিট করে এ কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে। কিন্তু কর অফিসের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে করদাতা আপিল, ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় কর অনাদায়ি হয়ে পড়েছে এবং প্রতি বছরই এর পরিমাণ বাড়ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ অনাদায়ি করের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।এনবিআর সূত্র জানায়, একজন ব্যক্তি রিটার্ন জমার পর দুই পদ্ধতিতে তা যাচাই-বাছাই করা হয়ে থাকে। প্রথমত, ৮২বিবি(২) ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট উপকমিশনার রিটার্নের গাণিতিক ত্রুটি-বিচ্যুতি খেয়াল করেন। হিসাবের গরমিল পাওয়া গেলে করদাতাকে নোটিশের মাধ্যমে তা জানিয়ে সংশোধিত রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। আয়কর মেলায় দাখিল করা ব্যক্তিশ্রেণির রিটার্ন এ পদ্ধতিতে অডিট করা হয়। দ্বিতীয়ত, এনবিআরের অনুমোদন নিয়ে ৮২বিবি(৭) ধারা মোতাবেক অডিট করা হয়। সাধারণ বড় বড় রিটার্ন এ পদ্ধতির অডিটের জন্য নির্বাচন করা হয়। কোনো রিটার্নের বিষয়ে কর কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তা অডিটের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়।

ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুফি মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, কর অফিস যৌক্তিকভাবে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট না করায় অনাদায়ি করের উদ্ভব হয়। এখন পর্যন্ত যত কর অনাদায়ি আছে, তা আদায় হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তিনি আরও বলেন, রিটার্ন অডিট বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। কর অফিসগুলো দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে রিটার্ন অডিটের জন্য বাছাই করে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতেই রিটার্ন বাছাই করেন। আর অডিটে দাবি উত্থাপিত হলে তা নিষ্পত্তিতে করদাতাকে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। তখন করদাতাদের বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। আর কর অনাদায়ি হয়ে পড়ে।সুফি মামুন আরও বলেন, এনবিআর অনাদায়ি কর আদায়ে ও মামলা নিষ্পত্তিতে এডিআর (অল্টারনেটিভ ডিসপুট রিসলিউশন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) ব্যবস্থা চালু করলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। এর কারণ এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর কর্মকর্তারা অবসরে যাওয়ার পর তাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক কথায় এডিআরের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ওইসব কর্মকর্তা তার বিভাগের বাইরে করদাতার হয়ে কথা বলেন না।

অবশ্য আয়কর কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ কিছু নির্ণায়কের মাধ্যমে রিটার্ন অডিটের জন্য বাছাই করা হয়। এক্ষেত্রে করদাতার আগের বছরের প্রদেয় কর, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া গোপন সংবাদকে বিবেচনা করা হয়। পরে এনবিআরের অনুমোদন নিয়ে করদাতার নথি পুনঃউন্মোচিত করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত আয়ের তথ্য গোপন করতে দেখা গেছে।কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথভাবে হিসাব না করে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ায় দাবির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি করদাতাদের অনেকেই দাবি করা আয়কর দিয়ে দিচ্ছেন বা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবার অনেকে আপিল-ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে মামলা করছেন। এ কারণে ওই কর আদায়ে বিলম্ব হচ্ছে। এক্ষেত্রে এডিআর ব্যবস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে করদাতাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।