চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারিআমিরাতে বৃষ্টিতে গাড়িতে আটকা পড়ে মারা গেলেন দুই জন সেরেলাক-নিডোয় অতিরিক্ত চিনি, পরীক্ষা করবে বিএফএসএজাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্রভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু
No icon

রাখাইনে ফেরার আকুতি

মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যার পাঁচ বছর উপলক্ষে কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গারা তাদের জন্মভূমি সোনালি আরাকানে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে। দীর্ঘসময়েও প্রত্যাবাসন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে আর থাকতে চান না তাঁরা। বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁরা এ দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। গণহত্যা দিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার উখিয়ার আশ্রয় শিবিরগুলোতে সমাবেশে রোহিঙ্গারা এসব কথা বলেছে। সমাবেশে তারা গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরে। এদিন টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। সকালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হোপ ইজ হোম স্লোগানকে সামনে রেখে রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহত শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকে স্মরণ করে তারা। সমাবেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায় তারা।শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে বলে জানান ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আমির জাফর। তিনি বলেন, তাঁর এলাকাসহ উখিয়ায় ২২টি ক্যাম্পে দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠান ছিল।

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, জামতলী, থাইংখালীসহ সব ক্যাম্পেই পৃথক সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। সকাল থেকেই রোহিঙ্গারা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করে। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও ছিল। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা গণহত্যার প্রতিবাদ ও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি জানায়।দিবসটি পালনে আগেই শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অনুমতি নিয়েছিল রোহিঙ্গারা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের কড়া নজরদারি ছিল। এসব সমাবেশে ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করে বলে দাবি রোহিঙ্গা নেতাদের।সবচেয়ে বড় আয়োজনটি ছিল মাদার ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় ও প্রত্যাবাসনের দাবিতে সোচ্চার শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।

সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সাধারণ সম্পাদক ও রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। সেদিন অনেক রোহিঙ্গা তাদের মা-বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান হত্যার নীরব সাক্ষী হয়। শেষমেশ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমরা। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনও আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। রাখাইনের আগের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আবার সোনালি আরাকানে ফিরতে চায়।রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার নুরুল আমিন বলেন, মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে ভিটেমাটি কেড়ে নিয়ে এ দেশের দিকে ঠেলে দিয়ে বড় অবপরাধ করেছে। আমরা নিজেরা জুলুমের শিকার হয়েছি। নির্যাতনের মুখে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি। এখন যুগ যুগ ধরে এ দেশে থেকে গিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও মানুষের ওপর জুলুম করতে চাই না। তাই আমাদের এ দেশ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মাস্টার কামাল বলেন, আমরা আমাদের জন্মভূমি, আমাদের দেশ ফেরত পেতে চাই। আরাকানের গোরস্তানে শুয়ে থাকা আমাদের মা-বাবা ও স্বজনদের ডাকে সেখানে ফিরে যেতে চাই।