NEWSTV24
বৈঠকে ইসরায়েল-হামাস, বিস্ফোরণে কাঁপছে গাজা
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩১ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

গাজায় শান্তি ফেরাতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় মিলিত হয়েছেন ইসরায়েল-হামাসের প্রতিনিধিরাসহ মধ্যস্থতাকারীরা। গতকাল সোমবার দুই পক্ষের মধ্যে ট্রাম্পের ২০ দফা নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধ অমান্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী। আজ ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২৩ সালের এই দিনে হামাস ইসরায়েলে হামলার পর গাজায় ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। হামলার বার্ষিকীর মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপে আছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা পরিকল্পনা নিয়ে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে মতামত পুনর্ব্যক্ত করেছেন।দুই বছর আগে যে হামলা শুরু হয়েছিল, তা আর থামেনি। গাজার ভবন, বাড়িঘর, পথঘাট মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৩১ বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৯৪ জনের প্রাণ যায়। গতকাল সোমবারের হামলায় একজন ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত দুই বছরে হামলায় কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। গত ৩ অক্টোবর হামলা বন্ধে ট্রাম্পের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

এদিকে অস্থায়ী তাঁবুতে ফিলিস্তিনিরা তাকিয়ে আছে কবে যুদ্ধ থামবে। বাস্তুচ্যুতরা একটু শান্তির আশায় চেয়ে আছেন বিশ্বনেতাদের দিকে। কারণ তারা যে পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন তা অবর্ণনীয়।দক্ষিণ গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নাদা। তাঁর স্বামী খাবার খুঁজতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। তিনি এখন দুই ছেলের সঙ্গে একটি প্লাস্টিকের তাঁবুতে থাকেন। নাদা বলছেন, ঘরবাড়ি ছেড়ে পথেঘাটে রাত কাটানো, এটা কোনো জীবন নয়। তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তির আশায় আছেন।নাদা বলেন, আমরা জানি না কোথায় যাব বা কী করব। আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে একা আছি। পরিবার আমার থেকে বিচ্ছিন্ন। আমাদের কাছে খাদ্য, পানি ও কাপড় নেই। আমরা প্রার্থনা করছি, একটি চুক্তিতে পৌঁছানো হোক এবং আমরা উত্তরে ফিরে যাব। যদিও সেখানে আমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।আরেকজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী আতাফ বলেন, যুদ্ধের প্রথম দিকে তাঁর বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমি যতক্ষণ সম্ভব আমার বাড়ি ধরে রেখেছিলাম, কিন্তু ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলার আঘাত আমাদের টিকতে দেয়নি। আমি প্রার্থনা করি সবকিছুর অবসান হোক এবং আবার যাতে পাড়ায় ফিরে যেতে পারি। বর্তমান অবস্থা কোনো জীবন নয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তারা গতকালও গাজা সিটিতে হামলা চালিয়েছে। তাদের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, গাজায় একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এক্স পোস্টে এক বিবৃতিতে দখলদার বাহিনী জানায়, তারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। বাহিনীর ওপর একটি মর্টার বোমাও ছোড়া হয়েছে, ফলে একজন সৈন্য আহত হয়েছে। গত মাস থেকে গাজার বৃহত্তম শহরটি দখলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আক্রমণ তীব্র করে।গাজা শহরে রোববার রাতভর বোমা হামলা চলে। গতকাল ভোরেও হামলা অব্যাহত ছিল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ভোরে শহরের বেশ কিছু অংশে ইসরায়েলি কামান ও বিমান হামলা চালানো হয়েছে। দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোলাবর্ষণ করা হয়। তেল আল-হাওয়ায় প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ হয়। আল-তুফাহ ও জননিরাপত্তা প্রাঙ্গণে বিমান হামলা হয়। গতকাল ভোরে যুদ্ধবিমান তেল আল-হাওয়া, বিচ ক্যাম্প এবং আল-জালায় আঘাত হানে। অন্যদিকে হামিদ রাউন্ডঅবাউট ও আল-শিফা হাসপাতালের কাছে আল-নাসর স্ট্রিট লক্ষ্য করে কামান হামলা চালানো হয়।

এদিকে সবুজ সংকেত পেলে গাজায় মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি করতে জাতিসংঘ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। খাদ্য ও সরঞ্জাম প্রস্তুত রয়েছে। সবুজ সংকেত পাওয়ার সঙ্গেই গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। জর্ডান, ইসরায়েলি বন্দর আশদোদ এবং অন্যান্য স্থানে হাজার হাজার টন পণ্য প্রবেশের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে এক হাজার ১৫২ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন।