সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পাওয়ার লড়াইয়ে কঠিন সময় পার করছে দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সব মিলিয়ে বিনিয়োগের মাঠ যেন ক্রমেই শুষ্ক হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের খরা কাটাতে চায় সরকার। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিট সম্পূর্ণ অনলাইনে শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ হিসাব খোলার তথ্য জানানোর শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ইক্যুইটিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনলেই দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা।অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ স্থবির থাকায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না, যা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করি, সামনের দিনে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিদেশিদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিট বা কর্মানুমতির বিপরীতে নিরাপত্তা ছাড়পত্র সম্পূর্ণ অনলাইনে শুরু হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কর্মীরা তাদের কর্মানুমতির বিপরীতে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আবেদন বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টালের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন।বিডা জানিয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কর্মীকে কর্মানুমতিরবিপরীতে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আবেদন আবশ্যিকভাবে বিডা ওএসএস পোর্টালের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। আবেদন যাচাইয়ের পর ২১ কার্যদিবসের মধ্যে কোনো আপত্তি না থাকলে নিরাপত্তা ছাড়পত্র মঞ্জুর হয়েছে বলে গণ্য হবে। কর্মানুমতিতে উল্লিখিত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আবেদন না করলে কর্মানুমতি বাতিল হয়ে যাবে।বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, নিরাপত্তা ছাড়পত্র ডিজিটাল হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য সেবা পাবেন। এ সংস্কার বাংলাদেশকে আরও বিনিয়োগবান্ধব করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিদেশি বিনিয়োগ হিসাব খোলার তথ্য জানানোর শর্ত শিথিল
বিদেশি বিনিয়োগ হিসাব খোলার তথ্য জানানোর শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের হিসাব খোলার পর তাৎক্ষণিক সেই তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে না। এতে ব্যাংকগুলো এসব হিসাব খোলার বিষয়ে আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অনাবাসী টাকা হিসাব (এনআরটিএ) ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত অস্থায়ী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের (এফসি) রিপোর্টিং প্রয়োজনীয়তা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে এনআরটিএ ও এফসি অস্থায়ী হিসাব খোলার সময় তাৎক্ষণিক জানাতে হবে না। এর পরিবর্তে অনুমোদিত ডিলারদের নগদায়ন (এনক্যাশমেন্ট) সার্টিফিকেট, অনলাইন ট্রানজেকশন আইডি, এনআরটিএ বা এফসি অস্থায়ী হিসাবের বিবরণী ও লেনদেন হয় এমন স্থায়ী হিসাবের বিবরণী ১৪ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।নতুন নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি তহবিল স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করা যাবে অথবা সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় রাখা যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের তহবিল যদি দেশীয় মুদ্রায় রূপান্তর করা হয়, তবে বিনিয়োগকারীরা অনলাইনে ফরম সি জমা দিতে পারবেন এবং কোম্পানি গঠনের ১৪ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে। যদি কোনো কারণে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ দেশে নিবন্ধিত না হয়, তবে প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর পর হিসাবের স্থিতি বিদেশে নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না।
ইক্যুইটিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনলেই প্রণোদনা
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে ইক্যুইটির (শেয়ার) মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারলে- ১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। দেশে কিংবা প্রবাসে বসবাসরত যে কোনো বাংলাদেশি এই প্রণোদনা পেতে পারেন। এই লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ প্রণোদনা স্কিম নামে একটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করছে বিডা। এই প্রণোদনা দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে ৭৫ লাখ ডলারের একটি তহবিল গঠন করবে সরকার। এটি গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে আসা মোট ইক্যুইটি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহের ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ওই অর্থবছর মোট ইক্যুইটি এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০ কোটি ডলার।