NEWSTV24
উচ্চাভিলাষী বাজেট থেকে সরে আসছে সরকার
বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৫:৫০ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছরে উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়ন করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বছরের শেষ সময়ে এসে বাজেট কাটছাঁট করতে হতো। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরির পরিকল্পনা করছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করার লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ববর্তী সরকারের শেষ বছরগুলোয় বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া অনেকটাই আমলাতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতা ফরম ফিল-আপ এক্সারসাইজ ছিল। বাজেট ঘাটতি, সামাজিক সুরক্ষা, রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা এবং প্রকল্পের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ছিল, অনেকটা অর্ডিনারি বৃত্তায়ন গড়ে ওঠে। গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, ডলার সংকট ও বৈদেশিক বাণিজ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরপরও বাজেটের আকার প্রতি বছর বেড়েছে।গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ প্রকাশ্যে এসেছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারল্য সংকট তীব্র হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের সময় কিছু অর্থনৈতিক সূচক কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল, যা প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত করেনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধি করেছে, তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ সংকটের কারণে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে। তাই আসন্ন বাজেটে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বাজেটে অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের একটি খসড়া রূপরেখা উপস্থাপন করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহেদ উদ্দিন মাহমুদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ বাজেট ইউনিটের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাজেট ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। তবে বাজেটের আকার কিছুটা কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ফলে এডিপির আকারও কিছুটা সংকুচিত করা হতে পারে।আগামী অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। করজাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য আয়কর দাতাদের চিহ্নিত করা হবে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিন্যাস করা হবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে নতুন পরিস্থিতি বিবেচনায় তা কিছুটা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। তবে বছরের মাঝপথে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে, ফলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় কিছুটা বেশি।