দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণে সরকার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছিল। গত মে মাসে স্পট মার্কেটে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজির দাম ছিল ২১ ডলার, সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৫৪ ডলার। দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই মাস থেকে স্পট মার্কেটের এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছে সরকার। এতে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ কমেছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।এই ঘাটতি মেটানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে দেশীয় কূপগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরই মধ্যে দেশীয় কূপগুলো থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি কূপের সংস্কারকাজ (ওয়ার্কওভার) চলমান। আগামী বছর পর্যন্ত আরো ১৪টি গ্যাসকূপ ওয়ার্কওভার, অনুসন্ধান ও উন্নয়ন করা হবে। যার মাধ্যমে দৈনিক আরো প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস উৎপাদন বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎস থেকেই পূরণ হতে যাচ্ছে স্পট মার্কেট এলএনজির চাহিদা।এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৪৬টি গ্যাসকূপ ওয়ার্কওভার, অনুসন্ধান ও উন্নয়নের মাধ্যমে দৈনিক আরো ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেট্রোবাংলার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে যাবে। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলার আর্থিক চাপও কমবে। সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি গড়ে প্রায় ১৫ ডলারে কিনতে পারছি। এখন স্পট মার্কেট থেকে ৫৪ ডলার দরে এলএনজি কেনা হলে প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি খরচ হবে। এই মূল্যে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হলে দেশের বিশাল ক্ষতি হবে। এ জন্যই আপাতত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি ক্রয় করে আসছি, যা এখনো অব্যাহত আছে। আর স্পট মার্কেট থেকে আনা হতো ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা গত জুলাই মাস থেকে উচ্চমূল্যের কারণে কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য দেশীয় কূপগুলো থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, সামনে যেসব কূপ খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো করা গেলে স্পট এলএনজির ঘাটতি আমরা মেটাতে পারব।