একের পর এক রাষ্ট্রীয় সংস্থার আপত্তিতে চট্টগ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়েছে সামান্যই। অন্যদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো সমীক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়াই প্রকল্প নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরুর পরই প্রথমে আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর নিষ্পত্তি না হতেই এবার আরও পাঁচটি সংস্থা আপত্তি জানিয়েছে। এসব সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল (ফ্লাড ওয়াল) নির্মাণ ও সড়ক উঁচু করা হলে নানা সমস্যার মুখোমুখি হবে বলে দাবি তাদের। ফলে প্রকল্পটি পাসের সাড়ে তিন বছর পর আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণশুনানি, সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ও যথাযথ সমীক্ষা না করে যেনতেনভাবে প্রকল্প নেওয়ায় এখন পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে সংস্থাটি।
প্রকল্পটির আওতায় নেভাল একাডেমি থেকে শাহ আমানত কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার প্রতিরোধ দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল) ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হবে। তবে ফ্লাড ওয়াল নির্মাণকাজ শুরুর পর প্রথম আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের আপত্তির মুখে বন্দর সীমানায় চার কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণকাজ বাদ দেয় পাউবো। এবার ১৫ নম্বর ঘাট থেকে বিএনএস ঈশা খাঁ পর্যন্ত আট কিলোমিটার এবং বাংলাবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল ও সড়ক উঁচুকরণ কাজ নিয়ে আপত্তি জানায় চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত ২৮ আগস্ট এসব আপত্তি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিস্কাশন শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হয়। এর বাস্তবায়নকাল গত জুনেই শেষ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর আওতায় রিটেইনিং ওয়াল ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, তীর সংরক্ষণ কাজ, ২৩টি রেগুলেটর নির্মাণ, ৬৯ পাম্প স্থাপন এবং ৭টি জেনারেটর বসানোর কথা রয়েছে।বেশুমার আপত্তি :প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আপত্তির মুখে পড়ায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়েছে। গত ৮ আগস্ট কমিটির সভায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আপত্তি তুলে ধরেছে।