NEWSTV24
ডলার সংকটে টান পড়েছে টাকায়
বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২ ১৬:২৪ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। মুদ্রাবাজারে চলছে ডলার সংকট। চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। যার বিপরীতে টাকা আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এতে করে টাকার তারল্যে টান পড়েছে। আবার বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমছে। নগদ টাকার সংকট মেটাতে অনেক ব্যাংক কলমানির পাশাপাশি এখন নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে।মাস খানেক আগেও কলমানিতে ধার দেওয়া অনেক ব্যাংক এখন নিয়মিত টাকা ধার করছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালীসহ এরকম কয়েকটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক কলমানির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত ধার করছে। এসব ব্যাংককে বর্তমানে তুলনামূলক বেশি এলসি খুলতে হচ্ছে। গত রোববার কলমানি থেকে ১৫টি ব্যাংক ৬ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ধার করে। একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয় আরও ৭ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।

প্রতিদিনই এভাবে কলমানি ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা নেয় ১৯টি ব্যাংক।রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, শুধু জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩৪ কোটি ডলারের বেশি কিনে তারা ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এ কারণে তাদের সাময়িক সংকট মেটাতে টাকা ধার করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার তারা ২ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার হয়েছে। এ সময় রপ্তানি আয় ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ডলারে উঠেছে। রপ্তানি আয় অনেক বাড়লেও আমদানির সঙ্গে ব্যবধান বেড়েছে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার। একই সময়ে আবার রেমিট্যান্স ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারে নেমেছে। এতে করে চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে উঠেছে। আগের অর্থবছর যেখানে ঘাটতি ছিল মাত্র ৪৫৮ কোটি ডলার।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে গত মে শেষে ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ডিসেম্বরে যা ২ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ছিল। আর গত বছরের জুনে ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং বিভিন্ন পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। গত জুন শেষে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে যা ছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তার আগের অর্থবছর শেষে ছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। অবশ্য সাম্প্রতিক ঋণ বৃদ্ধির মানে যে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে, তেমন নয়। মূলত বেশিরভাগ পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির ফলে টাকা আটকে যাচ্ছে। এতে করে তারল্যের ওপর টান পড়বেই। তবে ব্যাংকে ঋণযোগ্য তহবিলে কোনো সংকট নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে তারল্য বাড়াতে এরই মধ্যে সিএমএসএমই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। এখান থেকে ব্যাংকগুলো মাত্র ২ শতাংশ সুদে অর্থায়ন নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। গম ও ভুট্টা উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে আরও একটি পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।