দুজন মানুষ দেখতে একই রকম। এর মধ্যে একজন দুষ্ট প্রকৃতির। তিনি কৌশলে, গোপনে কোনো অপকর্ম করলেই দোষ এসে পড়ে নিরপরাধ আরেকজনের কাঁধে। রাম অউর শ্যাম, সীতা অউর গীতা, কিষান কানহাইয়াসহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র এমন কাহিনির ওপর ভিত্তি করেই। এবার বাস্তবে অনেকটা তেমন ঘটনাই ঘটেছে। তবে মানুষ নয়, ট্রাক নিয়ে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ টাকার ধান-পাটবোঝাই ট্রাক নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। গাড়ির নম্বর প্লেটের সূত্র ধরে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ট্রাকের মালিক কিছুই জানেন না। প্রযুক্তিগত যাচাইয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, তার ট্রাক অপরাধের ঘটনাস্থলে কখনও যায়নি। কিন্তু একই নম্বর ব্যবহারের কারণে প্রতিটি ঘটনার পর প্রথম আইনি ঝামেলা তাকেই সামলাতে হচ্ছে। এ যেন সেই পুরোনো বাংলা প্রবাদ- উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।ওই নম্বর প্লেটের (ঢাকা মেট্রো ট ১৫-২১৬৬) মূল ট্রাকটির মালিক গাজীপুরের বাসন এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, আমার একটি ট্রাক গাজীপুরসহ আশপাশের জেলায় বালু পরিবহনের জন্য ভাড়ায় খাটে। মাসখানেক ধরে হঠাৎ বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে, আমার ট্রাক তাদের মালপত্র নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। চালকের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তখন আমার সন্দেহ হয়, গাড়ির নম্বর প্লেট ক্লোন করে একটি চক্র পণ্য লুট করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছে, ডিজিটাল নম্বর প্লেট একাধিক থাকার সুযোগ নেই। পরে গত ২১ জুন আমি এ ঘটনায় বাসন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।
বাসন থানার ওসি মোহাম্মদ মালেক খসরু খান বলেন, অপরাধের ঘটনাগুলো আমার থানা এলাকায় নয়। তবে মূল ট্রাকটির মালিক এখানকার বাসিন্দা হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি জিডি করেছেন। এরপর কোনো ঘটনায় সংশ্নিষ্টরা তদন্তে এলে আমরা বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।, গত এক মাসে অন্তত তিনটি স্থানে ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করে পণ্য লুটের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মেহেরপুর থেকে ২৭০ মণ পাট, শেরপুর থেকে ২২০ বস্তা ধান ও রংপুর থেকে ২৬০ বস্তা ধান বোঝাই করার পর ট্রাক নিখোঁজ হয়। পুলিশের বিশ্নেষণে দেখা যায়, প্রতি ক্ষেত্রে নম্বর এক থাকলেও ট্রাকগুলো আলাদা। আর প্রতি ঘটনায় সংশ্নিষ্টরা যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার চুরি যাওয়া বা ছিনতাই বা অব্যবহূত সিম নতুন করে তুলছে। সে সিমগুলো সাধারণত অপরাধ সংঘটনের আগে চালু করে পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে ফেলা হয়। পণ্য লুটে জড়িত চক্রটিকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা না গেলেও তিন ঘটনাতেই চালক সেজে থাকা দুই ব্যক্তির ছবি তুলে রাখা হয়েছে।