দেশে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ হেপাটাইটিস সি ভাইরাস বহন করে। সবমিলিয়ে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশনে নানাবিধ জটিল লিভার রোগে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।আগামী ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস সামনে রেখে রোববার রাজধানীর বিজয়নগরে হোটেল অরনেটে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এ আয়োজন করে।লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী দাঞ্জুমা আদা ও হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশের ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না তারা এটি বহন করছেন।
তবে এই ভাইরাস শনাক্তে উপজেলা পর্যায়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের শরীরে হেপাটাইটিস বি কিংবা সি-এর জীবাণু থাকে, তাহলে ছয় সপ্তাহের মধ্যে তা সন্তানের দেহে প্রবেশ করে। এ জন্য প্রত্যেক নবজাতককে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা দিতে হবে। বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে সরকারকে অবহিত করেছি।লিভার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসবের হার অনেক পিছিয়ে। এখনও বাড়িতে ৫০ শতাংশের বেশি প্রসব হচ্ছে। কিন্তু মা ও দাইয়ের কেউই এ ব্যাপারে সচেতন নন। এতে করে মায়ের মাধ্যমে সন্তান সংক্রমিত হচ্ছে। এর জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রত্যেক অন্তঃসত্ত্বা নারী একবার হলেও যেন এই টেস্ট করান। পারলে গর্ভধারণের আগেই করাতে হবে।মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ১৮ শতাংশই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশ ১ শতাংশের নিচে থাকলেও রোহিঙ্গাদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। এ জন্য ডি সেন্ট্রালাইজেশন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
আমরা চাই সাধারণ মানুষের কাছে খুব সহজেই সচেতনতা পৌঁছাতে। গণমাধ্যমকে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, চিকিৎসার চেয়ে যে কোনো রোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে উত্তম। হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় সরকার শেখ রাসেল, বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে কয়েক কোটি টাকা দিয়েছে। ভাইরাসটি মা থেকে শিশুকে সংক্রমিত করে। এটির জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যদি চিকিৎসা ও প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।খুরশীদ আলম বলেন, এসব কাজের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। দেশে যত ব্লাড ব্যাংক আছে, সেখানে বিপুলসংখ্যক রক্ত সঞ্চালন হয়। সেখানে কী পরিমাণে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়, সেটি করতে পারলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। এ সময় ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী দাঞ্জুমা আদা হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।