চাকরি দেওয়ার নামে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে আসছিল সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা অনলাইনে গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবলের জন্য আকর্ষণীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত। আগ্রহীরা টাকার বিনিময়ে যোগ দেওয়ার পর জানতে পারেন বেতন নয়, নতুন চাকরিপ্রত্যাশীকে এনে কমিশন আদায় করতে হবে। সেটাই তার বেতন। এভাবে ৭০০ থেকে ৮০০ চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে এই অভিনব প্রতারণায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।রাজধানীর উত্তরখান থেকে এ চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র;্যাব। র;্যাব বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের কোম্পানি আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই এবং সরকারি অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশন নেই। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- সামসুন্নাহার ওরফে মায়া, জুয়েল ভূইয়া, কামরুজ্জামান ওরফে ডেনিস, ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার, মেহেদী হাসান, আল মামুন ওরফে মাসুদ ও তাজবির হাসান ওরফে লোহান।
গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র;্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র;্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন। তিনি বলেন, রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছিল। অনলাইনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে তাদের এমএলএম কোম্পানির বিভিন্ন প্রজেক্টে সাধারণ মানুষকে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে উত্তরখানের আটিপাড়া বাজারের মা মনোয়ারা সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লি. এর অফিসে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০টি জীবনবৃত্তান্ত ফরম, এক বক্স ভিজিটিং কার্ড, ১টি মানি রিসিট বই, ১০১টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, ২টি সিল, ১৫টি আইডি কার্ড, ৩টি রেজিস্টার, ৮টি মোবাইল ফোন, ৮ পাতা চাকরি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট এবং নগদ ২০ হাজার ৪০০ টাকা জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র;্যাব কর্মকর্তাদের তারা জানান, কোম্পানিতে ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার এবং তাদের অধীনে বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক, এটিএম বুথ, থ্রি স্টার অ্যাপার্টমেন্ট, গার্মেন্টস-টেক্সটাইল, মিল-ফ্যাক্টরি, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট, মেট্রোরেল হেড অফিস, চায়না প্রজেক্টসহ আরও কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে কিছু কর্মচারী নিয়োগের জন্য তাদের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিত। তাদের অফিস থেকে চাকরিপ্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বলা হয়। নির্দিষ্ট তারিখে চাকরিপ্রার্থীরা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য অফিসে আসার পর তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফরম, ট্রেনিং এবং আইডি কার্ড বাবদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা জামানত আদায় করা হতো। পদ অনুসারে ১০-১৫ হাজার টাকার বেতনের প্রলোভন দেখানো হতো।