NEWSTV24
দীর্ঘ হচ্ছে বেকারত্বের মিছিল
শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১৫:৫৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

নির্বাচনের আগে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই বেকার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এমনকি ক্ষমতায় গেলে সেই প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তার রূপরেখাও জানিয়ে দেয় দলগুলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ক্ষমতায় গেলে অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই চাপা পড়ে যায়। ফলে বেকার সমস্যা থেকে যায় আগের মতোই। অশিক্ষিত বেকার তো দূরের কথা, চাকরি হয় না লাখ লাখ শিক্ষিত বেকারেরও।দেশে প্রতিবছর উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করছে লাখ লাখ তরুণ। তাদের চোখে-মুখে থাকে একটা চাকরির স্বপ্ন; বিশেষ করে সরকারি চাকরি। সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। মাসে ৪-৫টির বেশি পরীক্ষা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন অনেকে, কিন্তু চাকরি আর হয় না। এই হতাশা ও ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় পড়ে অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন।সম্প্রতি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ে লেখাপড়া শেষ না হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী হতাশায় ভুগছিলেন।বেকারত্ব ঘোচাতে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টাও করছেন অনেকে। অবৈধ পথে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর পাশাপাশি গ্রেপ্তারও হতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি মধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সাত বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর   বলেন, বেকারত্ব কমাতে প্রথমত সরকারকে সময়োপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারলে ভালো হয়। যদিও সেটি কঠিন কাজ। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ;ি পেরিয়ে টানা পাঁচ বছর চেষ্টা করে চাকরি নামের সোনার হরিণ জোটেনি মো. হাসনাইন আহমেদ উজ্জলের কপালে। ফার্মগেটের তেজতুরী বাজার এলাকার একটি মেসে থেকে এখনো চাকরি খুঁজছেন তিনি। করোনার আগে টিউশনির টাকায় থাকা-খাওয়ার খরচ মিটে যেত। করোনায় সে টিউশনিটাও হারিছেন। এর মধ্যে মেসের সিট ভাড়া ও খাওয়া খরচ বেড়ে গেছে। রাজধানীতে টিকে থাকার যুদ্ধে এখন লড়াই করতে হচ্ছে এ তরুণকে।

লেখাপড়া শেষ করে দীর্ঘ সময় বেকার থাকায় হতাশ এনামুল হক নাইমও। বেকারত্বের গ ;ানি নিয়ে জীবিকার তাগিদে শেষমেশ বিদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে স্নাতকোত্তর পাস করা এ তরুণ।কিছুদিন আগেও বগুড়ার বেকার তরুণ আলমগীর কবির অভিনব কায়দায় এক বিজ্ঞাপন দিয়ে সবার নজরে আসেন। দেওয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞাপনে তিনি লেখেন, শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।আলমগীর, উজ্জল ও নাইমের মতো সারাদেশে এমন অসংখ্য তরুণ রয়েছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে এখনো বেকার রয়েছেন।দেশে বেকারত্বের সমস্যা প্রকট হলেও এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আছে কিনা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। সাধারণত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে বেকারের সংখ্যা উঠে আসে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে দেশে এই জরিপ হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছিল। সেটির ফল প্রকাশ করা হয় এক বছর পর, ২০১৭ সালে। অথচ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই বছর পরপর বিবিএসের এই জরিপ করার কথা।