দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে এই ফেব্রুয়ারির মধ্যেই টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। গত জানুয়ারিতে এই লক্ষ্য ছিল ৬৩ শতাংশ। তবে বাস্তবে ৫৭ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেছে। লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ছুটি বাদ দিয়ে ১৮ দিনের মধ্যে ১৩ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। টিকাদানের যে গতি, তাতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা। এরকম প্রেক্ষাপটে দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচির এক বছর পূর্ণ হলো আজ।এদিকে এখনও টিকার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর বড় অংশ গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা। শুরু থেকে টিকাদানে শহরের মতো গ্রামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ কারণে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে এক ধরনের অসমতা তৈরি হয়েছে। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশকে বাদ রেখে করোনা প্রতিরোধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। ভাইরাস নির্মূলের স্বার্থেই বাদ পড়া জনগোষ্ঠীকে দ্রুততম সময়ে টিকার আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৪ ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়। গত শনিবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ১০৭ জন। প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ছয় কোটি ৪৬ লাখ আট হাজার ৫৩৫ জন। একই সঙ্গে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৩৭২ জন।
এরই মধ্যে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে টিকাদান শুরু হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত এর মাধ্যমে এক কোটি ৮১ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৬ জন প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন এক কোটি চার লাখ ৮৭ হাজার ৯২৬ ডোজ। গ্রামের কেউ এখনও বুস্টার ডোজ পাননি। সব মিলিয়ে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ছয় হাজার ১৪ ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে গত ২১ দিনে টিকা বিতরণ করা হয়েছে দুই কোটি ২০ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ ডোজ।স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের অধিকাংশই টিকার আওতায় চলে এসেছে। শহরের ভাসমান জনগোষ্ঠীকেও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার লক্ষ্য থাকবে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চল। সেখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে টিকা কর্মসূচি চলছে। এই কার্যক্রমের গতি আরও বাড়ানো হবে। এর মধ্য দিয়ে টিকাদানে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আমরা সক্ষম হবো।স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে মাঝখানে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, এখন তা নেই। মোট ২৯ কোটি ডোজ টিকা আসবে। টিকা দিতে হবে ১২ কোটি মানুষকে। সে হিসাবে লাগবে ২৪ কোটি ডোজ। এরপরও পাঁচ কোটি ডোজ মজুদ থাকবে। এরই মধ্যে বুস্টার ডোজও দেওয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া করোনার চলমান ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র টিকা সহায়তা দ্বিগুণ করার আশ্বাস দিয়েছে। ফলে টিকা নিয়ে আর সংকট হবে না।