NEWSTV24
ইন্টারনেট আসক্তিতে ফল খারাপ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের
মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৪৫ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহভাবে আসক্তির জন্ম দিচ্ছে। বেশি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগ হারাচ্ছেন। খারাপ হচ্ছে একাডেমিক ফলাফলও। চট্টগ্রামের ছয়টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্সের ওপর ইন্টারনেট আসক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণায় এ তথ্য পেয়েছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক। ইন্টারনেটের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দশজনে আটজন বা ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে ক্লাসে মনোযোগ হারান। একই কারণে ৭২ দশমিক এক শতাংশ শিক্ষার্থী দৈনন্দিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন। আর ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলে ইন্টারনেট।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), চমেক ডেন্টাল ইউনিট, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ এবং আর্মি মেডিকেল কলেজের ৬১১ জন স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীর ওপর গবেষণা কাজটি পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা হক এতে নেতৃত্ব দেন।
গবেষণাটিতে আরও যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেহরুন্নিসা খানম, কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিহা তাসমিন জিনিয়া, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আহমেদ, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএসএম রেদওয়ান, ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন জাহান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবুরুশদ মো. মশরুর এবং কভিড-১৯ ঝুঁকি যোগাযোগ প্রকল্পের ইউএনএফপিএ ডা. শমরিতা বড়ূয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করা হয় গবেষণার কাজ। শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে।


গবেষণার ফলাফলে গবেষকরা দেখতে পান, ৯৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী কাজের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অগ্রগতি দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তারা একাগ্রতার অভাব অনুভব করছেন। তাদের মাঝে অ-শিক্ষাগত কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে।গবেষণায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলের সঙ্গে ইন্টারনেট আসক্তির উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ মিলেছে। অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহার শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেখা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী তাদের বেশিরভাগ পরীক্ষায় নিয়মিতভাবে পাস করেছেন; তাদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তাদের তুলনায় যারা বেশিরভাগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বারে পাস করেছেন তাদের আসক্তির হার অনেক বেশি।গবেষণা দলের প্রধান ডা. আফরোজা হক বলেন, গবেষণা কাজটি পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা পিলে চমকানোর মতো তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহার তাদের দৈনন্দিন প্রাতিষ্ঠানিক কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার কমাতে পারলে তাদের জ্ঞানীয় দক্ষতা অনেক বেশি উন্নত হবে। তারা তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্সকে উচ্চতর করতে সক্ষম হবে। গবেষণা কাজটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের অধ্যাপক ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ  বলেন, বিষয়টি আমাদের সবার জন্যই দুশ্চিন্তার। অভিভাবকদের নিজ নিজ সন্তানদের প্রতি অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। সন্তানরা সবসময় মূলত কী কাজে বেশি ইন্টারনেটে ব্যস্ত সময় পার করছে সেদিকে নজর রাখতে হবে। না হয় এর খেসারত সবাইকে দিতে হবে। গবেষকদের মতে, গবেষণা কাজটি করতে গিয়ে যেসব নতুন তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে তার মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয় যে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উন্নতির চেয়ে অবনতির কাজে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করছে।