NEWSTV24
ভাড়া দিতে না পেরে ফুটপাতে
সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

করোনা মহামারিতে উপার্জন হারিয়ে বিপাকে রয়েছে বহু মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ আছে চরম সংকটে। এমনিতেই তাদের আয় খুব সামান্য। তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালানোই মুশকিল ছিল। এর মধ্যে করোনার হানায় তারা আক্ষরিক অর্থেই পথে বসেছেন। যারা ছোটখাটো কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, পরিবার নিয়ে থাকতেন বস্তির ঘরে, তাদের অনেকেই সেই আশ্রয়টুকুও হারিয়েছেন। দুঃসময়ে কেউ কেউ গ্রামে ফিরলেও কিছু মানুষের ফেরার মতো কোনো গ্রাম নেই, ভিটেমাটি নেই। তাই তাদের ঠিকানা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত। চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন চৌরাস্তা (বিমান মোড় নামে পরিচিত) এলাকার ফুটপাতে রাতে কিছু মানুষকে ঘুমাতে দেখা যায়। একটি সূত্রে জানা গেল, তাদের সবাই আগে থেকেই ভাসমান ছিলেন না। কেউ কেউ করোনার প্রভাবে এসে রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাইয়ে এক বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে তেমন কাউকে পাওয়া গেল না। তবে তথ্যদাতা জানালেন, সেই চিত্র দেখতে হলে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতে দিনে পুলিশ বসতে দেয় না। অপেক্ষায় থেকে সন্ধ্যার কিছু পরে অবশেষে কয়েকজনের দেখা মিলল। তারা একজন-দুজন করে এসে বিমান স্থাপনাটির নিচে জড়ো হচ্ছিলেন। প্রশ্ন করতে প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। দুজন উঠে অন্যত্র চলেও গেলেন। তবে পরে দুজনের কাছে জানা গেল কিছু তথ্য। সুমন নামের এক যুবক জানালেন, তিনি বিভিন্ন সিগন্যালে থেমে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের কাছে ফুল বিক্রি করতেন। স্ত্রী নাহারকে নিয়ে থাকতেন আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার এলাকার বস্তিতে। একটি ঘরের ভাড়া দিতে হতো পাঁচ হাজার টাকা। তবে করোনাকালে তার আয় একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে। একপর্যায়ে ঘর ছেড়ে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসেন। চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতর পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ফুচকার গাড়ির নিচের অংশে রেখেছেন সেসব।

 

দিনে একবেলা রান্না করে খান, তারপর জিনিসপত্র আবার সেখানে রেখে দেন। আগে কাঁথা-বালিশ, হাঁড়ি-কড়াই বিমান ভাস্কর্যের খোলের ভেতর রাখতেন। তবে পুলিশ ঝামেলা করায় সেগুলো সরিয়েছেন। দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রী পার্কে বা ফুটপাতে যেখানে সুযোগ হয় থাকেন। রাতে তারা বিছানা পেতে ঘুমান ফুটপাতে। এতে ঘরভাড়া দেওয়া থেকে রেহাই পেয়েছেন। কারণ, এখন খাবার জোটানোই মুশকিল, ভাড়া দেবেন কীভাবে। সুমনের পাশেই ছিলেন ২৪ বছর বয়সী শরীফ। তাকে একটু রাগান্বিত মনে হলো। তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনারে এইগুলা কইয়া আমগো লাভ কী? আপনে কিছু দিবেন? অ্যার আগেও একদিন সাম্বাদিক আইসা ছবি তুলছে। কই, কিছু তো পাইলাম না। বুঝিয়ে একটু শান্ত করতে জানালেন, তিনিও সুমনের প্রতিবেশী ছিলেন বিএনপি বাজার বস্তিতে। দুজনের পেশাও একই। এখন তিনি স্ত্রী সাথিকে নিয়ে ফুটপাতে থাকেন। তাদের পরিচিত যুবক রুবেল ফুচকার দোকানে কাজ করেন। তিনিও এখন ফুটপাতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখন চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় সেভাবে লোকজন আসে না, ফুচকাও খায় না। তাদের সঙ্গে ছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী, যাকে সুমন ও শরীফ খালা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তবে তিনি কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন না। চাপাচাপি করতে তিনি উঠে রাস্তার অপর পাশে চলে গেলেন। এর ব্যাখ্যা হিসেবে সুমন বললেন, ভাই, বুঝেন না, কারও মন-মিজাজ ঠিক নাই। এইসব কইতে ভালো লাগে? কথা শেষে মোবাইল ফোনে ছবি তোলার উদ্যোগ নিতেই তারা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন এবং অনুরোধ জানালেন ছবি না তোলার জন্য। তাদের অনুরোধ রাখা হলো। তবে রাতে ওই এলাকার ফুটপাতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর একটি ছবি এ প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হলো।